×

রোগব্যাধি

বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী ও মৃত্যু

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী ও মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

   

বছরের শুরুতেই গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তা নি¤œমুখী হলেও এপ্রিল থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্য, বর্ষার মূল মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার নজির এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। জুলাই মাসে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মশা নিধন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এদিকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। বংশ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে এখন দাপট দেখাচ্ছে এডিস মশা। চলতি বছরের (পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত) সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। মৃত্যুও বাড়ছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

১৫ আগস্ট সচিবালয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, আমরা সচেতন রয়েছি। হেলথ সেক্টরের সঙ্গে আমরা কো-অর্ডিনেট করব। ডেঙ্গু বিষয়ে সবাই উদ্বিগ্ন রয়েছে, এটা যে কারো হতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। মাঝখানে একটা বিরতি ছিল। অনেক জায়গায় মেয়র নেই। ডেঙ্গু বিশেষ করে ঢাকা সিটিতে ফোকাস থাকে, প্রোগ্রাম চলমান। যেহেতু এখন নতুন করে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সিটি করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যেখানে যা প্রয়োজন সেটা করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চ থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকে। তবে ডেঙ্গু এখন বছর জুড়েই থাকছে। দেশের প্রায় সব জেলায় ডেঙ্গু এখন এন্ডেমিক বা স্থানীয় আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয় সংক্রমণ অক্টোবরে। ২০২২ সালেও ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল অক্টোবর মাসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় নভেম্বর মাসে।

আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে এই শঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে এবং আগামী মাসে আরো বাড়বে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় পানি জমেছে। সেই পানিতে এডিসের বংশ বিস্তার এবং পরবর্তী সময়ে সেই মশা ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটাতে ২১ দিন সময় লাগে। সেই হিসাবে আগস্ট থেকে সংক্রমণ বাড়ছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে, দেশের পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। যার কারণে মশা বাড়ছে।

নতুন সরকারের প্রগতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগমুক্ত হবে সেই প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো মশা নিয়ন্ত্রণে উপযোগী করা ও এখানে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা প্রয়োজন। মশা নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদের কাজে লাগানো দরকার। বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে কীটতত্ত্ববিদদের পদ থাকলেও অজানা কারণে সেই পথগুলো ফাঁকা। বিভিন্ন সময়ে এই পথগুলো পূরণের জোর সুপারিশ করলেও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ এখনই শুরু করতে পারলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এ বছর ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে রোগী বেশি। ঢাকার বাইরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেগুলো রাতারাতি পূরণ করা সম্ভব না হলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো নিতে হবে। এছাড়া সংক্রমণ কম হওয়ার কারণে রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে দেরিতে। তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় আমাদের চিকিৎসকরা এখন অনেক দক্ষতা অর্জন করেছে। হাসপাতালগুলোতেও ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো। তবে এরপরও জেলা, উজেলার সব হাসপাতালে বাড়তি প্রস্তুতির দরকার। পাশাপাশি জনগণের সচেতনতাও দরকার। দেশের মানুষ ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে জানেন। এই মশা প্রতিরোধে কী করতে হয় তাও জানেন। কিন্তু জানার পরও বাড়িঘর পরিষ্কার করেন না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে আমাদের সবাইকে।

গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৬৫ জন। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারোর মৃত্যু হয়নি। রবিবার মৃত্যুশূন্য দিনে রোগী ছিল ৩৩৪ জন। চলতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯ হাজার ৮১৬ জন। আর প্রাণহানি হয়েছে ৭৪ জনের।

আরো পড়ুন: মেয়র-চেয়ারম্যানরা অপসারিত

মাসভিত্তিক তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৫৫ জন রোগী ও ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে রোগী ৩৩৯ ও ৩ জনের মৃত্যু, মার্চে ৫ জনের মৃত্যু ও রোগী ছিল ৩১১ জন। এপ্রিল থেকে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। এ মাসে ২ জনের মৃত্যু ও ৫০৪ জন রোগী, মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী ও ১২ জনের মৃত্যু হয়। জুনে ৭৯৮ জন রোগী ও ৮ জনের মৃত্যু হয়। আর জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬৯ জনে। মৃত্যু হয় ১২ জনের। আর আগস্ট মাসের ১৯ দিনে রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৯৬; আর ডেঙ্গুতে প্রাণ হারায় ১৮ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App