বাজেটে থাকবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রয়াস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২০, ১০:২২ এএম

করোনা সংক্রমণজনিত বৈশ্বিক মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, ঠিক ওই সময়ই সংসদে ঘোষণা হতে যাচ্ছে জাতীয় বাজেট। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জানা গেছে, করোনাকালীন নানা টানাপড়েন মেনে নিয়েই খসড়া বাজেট তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৫ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য আকারের বাজেটে করোনা ভাইরাসে স্বাস্থ্য, খাদ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ নানা খাতে ব্যয় বাড়াকে দায়ী করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে বেরিয়ে জনকল্যাণমুখী বাজেটে মৌলিক মানবাধিকারের ওপর গুরুত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত পোষণ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, করোনা মহামারি বিবেচনায় রেখেই বাজেটে প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্য প্রতিফলিত হবে।
বাজেটে স্বাস্থ্য খাত, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। গুরুত্ব দেয়া হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্ন আয়ের মানুষকে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে। করোনার থাবায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বেশ কিছু চলমান প্রণোদনা চালু থাকবে। বিনামূল্যে চাল বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে গরিব মানুষকে চাল সরবরাহের মতো প্রণোদনা আরো কিছুদিন চালু থাকতে পারে। আওতা বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও উপকারভোগীর সংখ্যার। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ একটি করোনা সংক্রমণ রোধ ও আক্রান্তদের চিকিৎসা। অন্যদিকে করোনাজনিত অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সুরক্ষা করা।
মানুষ যখন জীবন বাঁচানোর কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত, ঠিক তেমনি এক মুহূর্তে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করাটা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সেক্টরের সঠিক হিসাব-নিকাশ করা কঠিন। এছাড়া করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির কতটা ক্ষতি হতে পারে তা নিরূপণ না করেই বাজেট ঘোষণা করা হলে সেই বাজেটে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত নাও হতে পারে। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, এবারের বাজেটে গতানুগতিক কিংবা শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব করলে চলবে না। সুনির্দিষ্ট একটা কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে বাজেট হতে হবে। বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সরকার কী করতে চায়, বাজেটে তার উল্লেখ করতে হবে।
তবে এবারের বাজেটেও উপেক্ষিত সর্বজনীন বিমা ব্যবস্থা চালুর দাবি। চালু হচ্ছে না সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। অগ্রাধিকার পাচ্ছে পাঁচটি মেগা প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চতুর্থ স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচি, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্প। টাকার অঙ্কে আগামী অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে ওই পাঁচ প্রকল্পে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারের অগ্রাধিকার অন্য প্রকল্পগুলোতে বিশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেমন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণে (থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ) ২ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্পে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করছে এমন মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। বাজেটেও এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া এবারের বাজেট ভিন্ন প্রেক্ষিতে। বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন বাঁচানো, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড-১৯ বিশ^কে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। আমাদেরও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই এবারের বাজেট কোনো গতানুগতিক বাজেট হবে না। বাজেট জনকল্যাণমুখী হবে। দলের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, সুশাসনের পাশাপাশি জীবন মানোন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়বে। নারী, শিশু, বয়স্কদের দিকটি আরো বেশি করে চিন্তা করা হবে।