সোনালী লাইফের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালসহ ৬ দাবি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বরখাস্তকৃত শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়া, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সোনালী লাইফের প্রশাসকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে তারা আন্দোলন শুরু করে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে কোম্পানির স্বাভাবিক কার্যক্রম।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সোনালী লাইফের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন- অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল কাফি, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা এবং সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ আজিম।
আরো পড়ুন: আবেদ আলীর ছবি শেয়ার করে বিস্ফোরক মন্তব্য সোহানা সাবার
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এর আগে, গত রবিবার কোম্পানির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন প্রশাসক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌস। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। তবে তারা এ অভিযোগকে ভিত্তিহিন বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রশাসক প্রতিহিংসামূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে বরখাস্তের আদেশ জারি করেছেন।
এদিন আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। ওই স্মারকলিপিতে গত ২ মাসে প্রশাসকের নেয়া নানান পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। বলা হয়, অনৈতিক, অনভিপ্রেত, দূরভীসন্ধিমূলক পদক্ষেপের কারণে সোনালী লাইফ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা ধেকে উত্তরণের জন্য তারা ৬টি দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো- ১. সব এফএ, ইউএম ও বিএমদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। ২. নিরপেক্ষ অডিট কোম্পানি দিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। ৩. স্যালারি পলিসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়ম যথাযথ প্রতি পালনের সাপেক্ষে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহিল কাফী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আজিম এবং সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদকে দ্রুত পদে বহাল করতে হবে। ৫. হেড অফিসের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়োগকৃত অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং ৬. আইডিআরএর’র প্রশাসক নিয়োগপত্রের ৯৫(১) ধারার বাইরে স্বেচ্ছাচারী কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যাবে না। ইচ্ছামত নিয়োগ ও বরখান্ত বন্ধ করতে হবে।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সোনালী লাইফের এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এএমডি) সাহেল রহমান তার বক্তব্যে বলেন, সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই। সঠিক সময়ে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্ন করার অভিযোগে সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। এই নিয়োগটাই ছিল অবৈধ।
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্ট যেখানে প্রশাসককে তদন্তের জন্য সময় দিয়েছিলো ২ মাস সেখানে ৩ মাস হয়ে গেলেও এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়াও সোনালী লাইফকে ধংস করার জন্য কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে, সেলস পলিসি বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসকের অদক্ষতার কারণে গত ৩ মাসে সোনালী লাইফের ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সাহেল রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করছি। প্রশাসককে অমান্য করার এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে আইন প্রশাসক নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি আইডিআরএ’র আইনের বাইরে গিয়ে আমাদেরকে ছাঁটাই করছেন। তিনি (প্রশাসক) নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করেছেন, সেলস পলিসি বন্ধ করেছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। এটা করা তার কোনো এখতিয়ার নেই।
আরো বক্তব্য দেন কোম্পানির এসিসট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এএমডি) আরেফিন বাদল রনি। তিনি বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। সেলস পলিসি ও বেতন-ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে অবৈধভাবে। জুলাই মাসে এসে তিনি (প্রশাসক) মার্চ মাসে জারি করা সার্কুলার বাতিল করেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।