অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন
ঋণের কিস্তি পরিশোধ সময়মতোই হবে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আমরা সময়মতো বৈদেশিক ঋণের সব কিস্তি দেব, পরিশোধ করব। আমাদের অবস্থা এত খারাপ না। গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কমিটমেন্ট যেটা আছে তা রাখতে হবে। বাইরে থেকে অনেকে বলছে কিছুই নাই, কথাটা ঠিক না। এখন সবাইকে বাড়তি চেষ্টা করতে হবে। জিডিপির তুলনায় আমাদের ঋণ এত বেশি না। ইতালি ও গ্রিসের অবস্থাও ভালো না। তিনি আরো বলেন, অনেকে বৈদেশিক ঋণের টাকায় ৫০০ টাকার জিনিস ৫ হাজার টাকায় কেনে। ভাবখানা এমন এটা পরিশোধ করা লাগবে না। এটা চলবে না।
এদিকে গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসিতে পরিকল্পনা কমিশন, মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থ অপচয় বন্ধ করতে হবে বলে। তিনি বলেন, প্রকল্পের বাস্তবতা ও বরাদ্দ কী হবে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাইরের টাকা ইচ্ছেমতো খরচ নয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া কিছু চলবে না। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবন-জীবিকার প্রকল্প চালু রাখা হবে। বড় বা মেগা প্রকল্পের অর্থছাড় বড় হয়, তাই এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বার্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নিয়ে চিন্তা করার কারণ। অনেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) চার প্রকল্পের দায়িত্বে। চারটি প্রকল্পে দায়িত্ব মানে চারটি গাড়ি। এটা চলবে না। আমি অ্যাসেস (মূল্যায়ন) করে দেব। অনেকে কম টাকা ব্যয় করতে পারে না। ক্লাইমেট বিরাট ব্যাপার, বন্যা হয়, পরিবেশের নামে অনেক টাকা খরচ হয়। প্রকল্পে সমন্বয়হীনতা আছে, এটা দূর করতে হবে। এছাড়া এখন থেকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে নয় বরং প্রকৃত মূল্যস্ফীতি এবং জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন বলেও জানান তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কয়েকদিনের স্থবিরতার কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে; যার প্রভাবে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। তবে এখন বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে দাম আরো কমে আসবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার উপায় নির্ধারণ করতে আজ বুধবার বৈঠকে বসছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বেলা ১১টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার জন্য অর্থ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থ উপদেষ্টা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা দেখা দেয়। ফলে রাজধানী ঢাকা কার্যত সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল, বন্ধ ছিল পণ্য সরবরাহও। এর ফলে জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়- যা আগের ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় জুলাই মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আগের মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এছাড়া বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দামও বেড়েছে। জুলাই মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ- যা জুন মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। আন্দোলনের ফলে তিন খাতেই বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার।
এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা আছে। সাপ্লাইচেইন নেই। ৬ টাকার বেগুন ৮০ টাকা টাকায় কেন? বাজার মনিটরিং নিয়ে কাজ করব। কিছু বন্ধু-বান্ধব রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, পরিবহনে টাকা তোলে, তাদের বলব দাঁড়িয়ে থাকবেন না।