ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে সভা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ পিএম

ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সচেতনতামূলক সভায় অতিথিরা। ছবি: ভোরের কাগজ
ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে এক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল জলিল। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানতউল্লাহ, সহ-সভাপতি হারুন উর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়াসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা, বিভিন্ন ডিম ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
সভার শুরুতেই অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস সচেতনতামূলক সভার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার তদারকি/অভিযান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় বাজারে হঠাৎ ডিমের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিম, সোনালি মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে বাজারে মূল্য নির্ধারণের প্রভাব পড়েনি। এর কারণ উদঘাটন ও সমস্যা নিরসনে করনীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে আজকের এই সভার আয়োজন করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল অভিযান পরিচালনাকালে ডিম বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসংগতি যথা বিভিন্ন ফার্মের ক্যাশমেমোতে ডিমের দর এবং মোট টাকার কথা উল্লেখ না থাকা, ক্যাশ মেমোতে দর উল্লেখ না থাকা, ডিম ক্রয়ের ক্যাশমেমো না থাকা, পাইকারী আড়তে ডিম বিক্রিতে ক্যাশমেমোতে কার্বন কপি না থাকা, খুচরা ডিম বিক্রয়ে ক্যাশ মেমো না দেয়া, মুল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, সাদা ক্যাশমেমো প্রদান করা, ১টি আড়তে তদারকি করতে গেলে অন্য সব আড়ত বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি সভায় তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন: যে ৮ শর্তে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেলো ৪৯ প্রতিষ্ঠান
আলোচনায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানতউল্লাহ বলেন, ২০১২ সালে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে ডিমের উৎপাদন গাজীপুর হতে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ ইত্যাদি জেলায় চলে যায়। এসব জেলায় উৎপাদকের বাহিরে মধ্যসত্ত্বভোগী কাজ করে এবং তাদের সহযোগিতা ছাড়া পাইকাররা ডিম ক্রয় করতে পারেন না। বর্তমানে তেজগাঁও এলাকায় ২২-২৪ জন ডিমের আড়তদার রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম ক্রয় করতে পারলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম বিক্রয় করতে পারব।
তিনি আরো বলেন, অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের ফলে আমরা পূর্বের চেয়ে আরো অধিক সচেতন হয়েছি। শেষে তিনি সব পর্যায়ের ডিম ব্যবসায়ীসহ মধ্যসত্ত্বভোগীদের সমন্বয়ে সভা আয়োজন করার অনুরোধ জানান।
সভায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, ডিম উৎপাদক থেকে আড়ত পর্যায়ে আসা পর্যন্ত তদারকি করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক মুনাফা পেলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম বিক্রয় করতে পারব।
আলোচনায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া জানান কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হতে তাদের পর্যাপ্ত ডিম সরবরাহ করা হয় না। তিনি বলেন, আমরা ডিমের ক্রয় মূল্য বিবেচনা করে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। তিনি আরো বলেন, আমরাও চাই ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকুক। এ লক্ষ্যে সমিতি অধিদপ্তরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, সুস্থ্য ধারায় ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকে। বাজার ব্যবস্থাপনা উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসায়ীদের পরিমিতিবোধ বজায় রেখে গ্রহণযোগ্য লাভ রেখে ব্যবসা করার আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন: ইলিশের প্রথম চালান গেল ভারতে
তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যসত্ত্বভোগী এড়িয়ে ডিমের উন্মুক্ত বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে সরাসরি ফার্ম হতে সরবরাহ করা গেলে ডিমের মূল্য হ্রাস পেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ীদের এসএমএসের মাধ্যমে ডিমের মূল্য নির্ধারণে জড়িতদের তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, যে কোন পরিস্থিতিতে সরকার নির্ধারিত ডিমের মূল্য বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল জলিল সভায় উপস্থিত সবাইকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আমরা সবাই ভোক্তা। আপনারা ব্যবসায়ীগণও ভোক্তা। কেননা আপনারা একটা পণ্য বিক্রয় করলেও অন্য আরেকটি পণ্য ক্রয় করে থাকেন। তিনি ব্যবসায়ীদের মানবিক আচরণ করার পাশাপাশি যৌক্তিক পর্যায়ে লাভ করার অনুরোধ জানান। তিনি তেজগাঁও এর আড়তদারদের নিজস্ব পাইকারদের পাশাপাশি অন্যান্যদের জন্যও ডিম প্রদানের অনুরোধ করেন।
তিনি আরো বলেন, এখানে যেহেতু চাঁদাবাজি নেই তাই ডিমের মূল্য হ্রাস পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তেমনটা বাজারে দেখা যাচ্ছে না। তিনি মধ্যসত্ত্বভোগী হ্রাস করে ডিমের বাজার উন্মুক্ত করার কথা বলেন। তিনি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিভাবে ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান।
তিনি ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় এবং সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্যে সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে আশা ব্যক্ত করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাসহ সভায় উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সভা শেষ করেন।