মাছ-সবজির পর নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে পাঙাস

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাজারে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতাদের স্বস্তি ফিরছে না কোনো কিছুতেই। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত সিন্ডিকেটের কারণে ডিম, মাছ ও সবজির বাজারের আগুন অন্তর্বর্তী সরকারও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তাই পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর। ডিম, মাংসের পর এবার বেড়েছে ‘গরিবের মাংস’ খ্যাত পাঙাসের দামও। সেই সঙ্গে অন্যান্য মাছের দামও বাড়তি।
হঠাৎ করে সব কিছুর দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না বিক্রেতারা। এদিকে দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে পরিবারগুলোতে বাড়ছে অস্বস্তি, কমছে সুখ-শান্তি।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম আবারো বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশে। এছাড়া প্রায় বিভিন্ন জাতের মাছের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশে বেড়েছে দুই থেকে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত। তবে ডজনে ১০ টাকা কমেছে ডিমের দাম।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরবটি ১৪০, ঢেরশ ১১০-১২০, করলা ৯০, চিচিঙ্গা ৯০, পটল ৯০-১০০ ধুন্দল ৮০, বেগুন ৭০-১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা সাধারণত ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আজকের বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণত ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই কিনতে পারা যায়। এ ছাড়াও আজকের বাজারে পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। শুধু পাঙাস আর রুই মাছই নয়, দাম বেড়েছে তেলাপিয়া, পাবদা, চিংড়ি, ইলিশসহ প্রায় সব ধরনের মাছেরই। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ১৭০০ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৯০০-২০০০ টাকায়। ৪৫০ টাকার রুই ৬০০ টাকায়।
আরো পড়ুন: সব রেকর্ড ছাড়ালো ইলিশের দাম
কেজিতে ১০-২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ১৮০-১৯০ টাকার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়। তবে কমেছে ডিমের দাম। ডজনে ১০ টাকা কমে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ টাকায়।
সাধারণত মাছের বাজার ঘুরে পাঙাস-তেলাপিয়া মাছেই স্বস্তি মিলতো মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণত ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে থাকে। এ ছাড়াও বাজারে চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০, কার্প জাতীয় মাছ ৩৫০-৩৮০, চাষের শিং ৪০০, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০-৭০০ টাকায়।
বাজার করতে আসা টুটুলল হাসান নামক এক ক্রেতা বলেন, দিনের পর দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ছোট একটা চাকরি করে আগে যা বেতন পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাওয়ার উপায় নেই।
আরো পড়ুন: বিশ্ববাজারে আরো বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম
সাদ নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করি, আমাদেরকে অনেকটাই মাছের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিন্তু দামটা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদেরকে অনেকটাই বিপাকে পড়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা চিন্তা করে কে? আমরাই বা আমাদের কষ্টগুলো কাকে বলব? দিনের পর দিন চাকরির পড়াশোনা করে যাচ্ছি, বাবা মায়ের হাত থেকে টাকা আনতে আনতে এখন আর চাইতে ইচ্ছে করে না। এখন তাহলে আমাদের উপায় কি?
বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি বন্যার কারণে অসংখ্য মাছ চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনকি এই কারণে বাজারে মাছের চাহিদাও বেশি। ফলে দামও কিছুটা উর্ধ্বমুখী। বাজারে মাছের বড় একটা অংশই আসে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর এলাকা থেকে। কিন্তু কয়েকদিন আগেই সেসব এলাকায় বন্যার কারণে বেশকিছু চাষিদের মাছ ভেসে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।
এক বিক্রেতা বলেন, ইলিশের মৌসুম থাকায় জেলেরা এখন সাগর-নদীতে অন্যান্য মাছ ধরতে চায় না। ইলিশের ভালো দাম থাকায় সবাই এখন ইলিশের পিছনে ছোটে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই ইলিশ ধরা বন্ধ হলে মাছের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।