বন্যা-ঘূর্ণিঝড়
১০ জেলায় ব্যাপক ফসল নষ্ট, খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম

নষ্ট হয়েছে ৭৮ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমি। ছবি : সংগৃহীত
দেশে উৎপাদিত মোট চালের কম-বেশি ৪০ শতাংশই আসে আমন ধান থেকে। কিন্তু সম্প্রতি বন্যা-ঘূর্ণিঝড় ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে খাদ্য উদ্বৃত্ত ১০ জেলায় ব্যাপক ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফসলের ঘাটতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় সংকট তৈরির শঙ্কা দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সরকার এখনই জরুরি উদ্যোগ না নিলে অর্থনীতিতেও চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
নওগাঁ
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের মাঠ বরেন্দ্র জনপদের ঐতিহ্য। এ জনপদের অন্যতম জেলা নওগাঁ, সারা দেশের মোকামগুলোতে ধান-চালের সিংহভাগ চাহিদা মেটায়। বছরে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয় এ জেলায়। এ ধান থেকে ১৭ লাখ মেট্রিক টন চাল হয়। এরমধ্যে উদ্বৃত্ত ১১ লাখ মেট্রিক টন চালের যোগান নিশ্চিত করে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায়।
এবার ঠিক উল্টো চিত্র। মাঠজুড়ে আমন ধান শোভা ছড়ালেও উদ্বৃত্তের অন্যতম কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে। যেখান থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝিতে বিভিন্ন বালাই আর চলতি সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে ১০ শতাংশ ধান নষ্ট হওয়ায় কমপক্ষে ১ লাখ মেট্রিক টন চাল কম পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের আকস্মিক বন্যায় লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে, এমনকি কৃষকের ঘরের ধানের বীজও। অথচ দেশের মোট খাদ্য চাহিদার ১০ শতাংশই পূরণ হয় খাদ্য উদ্বৃত্তের এ অঞ্চল থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা থেকে উদ্বৃত্ত পাওয়া যায় প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন ধান। এবার রোপা আমন আবাদ হয়েছিল ৬ লাখ ১২ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বানের পানির জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয় ৯৬ হাজার ৩৮৭ হেক্টর। নষ্ট হয়েছে ৭৮ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমি। এতে এবার মোট উৎপাদনের প্রায় ১৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা কৃষি অফিসের।
ফেনী
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিগত বছরগুলোর আমন ধান উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জেলা ফেনীর শস্য ভান্ডারও এবার ঘাটতির মুখে পড়েছে। চলতি আমন মৌসুমে আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর কম। এমন ঘটনা এ জনপদের প্রথম। অথচ গত ৫ বছরে জেলায় গড়ে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ মেট্রিক টন চাল। এবার ৬৬ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৪০ হাজার হেক্টরে আবাদ হওয়ায় চাল উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।
এবার বন্যায় আক্রান্ত খাদ্য উদ্বৃত্ত ১০ জেলার ফসলের ঘাটতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় সংকট তৈরির শঙ্কা দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এজন্য সরকারকে এখন থেকেই নানা উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. ফকির আজমল হুদা বলেন, খাদ্য ঘাটতির আমাদের যে বাস্তবতা, সেখানে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন আমদানি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার আছে এবং বাংলাদেশ সরকারি এ পরিমাণ চাল আমদানি করার সক্ষমতা আছে। এটা করলে বাজারে চালের যে ঘাটতি রয়েছে সেটা লাগব হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিয়মিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষি ও সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।