মুরগির বাচ্চায় ৭২০ কোটি টাকা লুটপাট: বিপিএ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জানাচ্ছে যে, অ্যাসোসিয়েশনের আপ্রাণ চেষ্টা, সাংবাদিকদের বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপের ফলে মুরগির বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং দাম নিম্নমুখী হয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশের পোল্ট্রি খাতে আশার আলো হিসেবে কাজ করছে।
মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড ও পশু খাদ্য উৎপাদনের শীর্ষ কোম্পানিগুলো যেমন ১. নাহার এগ্রো পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি, ২.কাজী ফার্মস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি, ৩. প্যারাগন পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি, ৪. সিপি বাংলাদেশ, ৫. নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী, ৬. পিপলস পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী, ৭. ডায়মন্ড পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী, আরো ৮ থেকে ১০টি কোম্পানি হাতে গোনা গুটি কয়েক কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট এবং ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবে কোন কারণ ছাড়াই গত আড়াই মাসে মুরগির বাচ্চার দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিক বাজার দরে একটি বাচ্চার দাম ৩০-৩৫ টাকা থাকলেও তা ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে ৬০-১০০ টাকায় পৌঁছায়, যা ৫ ডিসেম্বর টানা ৮০ দিন পর্যন্ত মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট চলমান ছিল।
প্রতিদিন সকল ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ৩০ লাখ পিস। কোম্পানিগুলো ১টি মুরগির বাচ্চায় যদি গড়ে ৩০ টাকা বেশি নিয়ে থাকে তাহলে ১ দিনে ৯ কোটি টাকা দাঁড়ায় এভাবে গত আড়াই মাসে (৮০ দিনে) ৭২০ কোটি টাকা লুটপাট হয়। যা খামারিদের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। পোল্ট্রি ফিড এবং বাচ্চা উৎপাদনকারী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মিনিটে ঘণ্টায় দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করেছে। এসব অসাধু কার্যক্রম প্রান্তিক খামারিদের ওপর গুরুতর চাপ তৈরি করেছে, যার ফলে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। বাচ্চার এবং ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক খামারিরা তাদের পুঁজি হারাচ্ছেন। অনেক খামারি লাভজনক না হওয়ায় তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে শিক্ষিত নারী, বেকার যুবক উদ্যোক্তাদের প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়েছে এবং খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়েছে। মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। এটির সরাসরি প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
কোম্পানিগুলোর দেয়া ফিড মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ খতিয়ে দেখতে হবে যে তারা ফিড মুরগির বাচ্চায় কি পরিমান লাভ করতেছে এবং তাদের লাভের মার্জিন নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিত এবং তারা সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে কিনা এবং সঠিক মাত্রায় ভ্যাট দিচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত। এর কারণ গত কিছুদিন আগে নাহার কোম্পানির একটি প্রতিবেদন দেখতে পেয়েছিলাম সেখানে দেখা গেছে নাহার গ্রুপ ৩০০ মুরগী দিয়ে খামার শুরু করে এখন তার বাৎসরিক লাভের পরিমাণ প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকা কিভাবে সম্ভব এগুলো খতিয়ে দেখা উচিত।
আরো পড়ুন: ই-সিগারেট আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা
এরকম ভাবে সকল কোম্পানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদেরকে জিম্মি করে ফিড ও মুরগির বাচ্চায় অধিক মুনাফা করে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের লাভের অংশ কমে যাচ্ছে। ভোক্তাদের ক্রায় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে এগুলো সরকারের খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে প্রান্তিক খামারিদেরকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে তাহলে ডিম মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে মুরগির বাচ্চার দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, যা খামারিদের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে পোল্ট্রি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে এবং খামারিরা কিছুটা স্বস্তি লাভ করেছেন। তবে, এবার সরকারের দৃষ্টি পোল্ট্রি ফিডের দিকে দিতে হবে। পোল্ট্রি ফিডের দাম কমানো হলে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ আরো কমানো সম্ভব। ফলে ডিম ও মুরগির দামও সাশ্রয়ী হবে এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে যা সাধারণ মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। সরকারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে খামারিরা লাভবান হবে এবং দেশের পোল্ট্রি উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।
বিপিএ’র পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে সহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাকে যারা সঠিক সময়ে এবং কার্যকরভাবে বাজারের অস্থিরতা মোকাবেলা করেছেন এবং পোল্ট্রি খাতের জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা উচিত এবং সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এতে বাজারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
পোল্ট্রি ফিডের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ফিডের দাম কমানো উচিত। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমে যাবে এবং ডিম ও মুরগির দাম সাশ্রয়ী হবে। ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য সহজ ঋণ, ভর্তুকি এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে তারা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারে। ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগি ও ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পণ্য থাকে। পোল্ট্রি খাতে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে খামারি, ভোক্তা এবং সরকার সবার স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। এতে খামারিদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে এবং পোল্ট্রি খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে।