×

অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ

ছবি : সংগৃহীত

   

সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। কোন জিনিসের মূল্য একবার বাড়লে সেটি কমানো কঠিন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে এবং বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য এসেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির জায়গায় এখনো তেমন পরিবর্তন আসেনি। গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে উপদেষ্টার সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে একটি কাঠামোগত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে এর সমাধান হবে না। বাজারে পণ্যের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে পর্যাপ্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনা- এ তিনের যথাযথ সমন্বয় ঘটাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

তথ্য বলছে, এ মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক। আর অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি। কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার ঘোষণা করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যায়নি। অর্থাৎ ভোগান্তিতে থাকা সাধারণ মানুষের মতোই বর্তমান সরকারের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে শুল্কছাড়সহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগের সরকারও নীতি সুদহার বাড়ানোসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে বাস্তবতা বলছে, শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না মূল্যস্ফীতি।

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এমন উদ্বেগের কথা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। সরকারি হিসাবে, গত নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বেশি, ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে, গত এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। এত উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি এই মুহূর্তে খুব কম দেশেই আছে। তবে বাস্তব অবস্থা সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি। অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছেন, বাস্তবে মূল্যস্ফীতির হার আরো বেশি হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনেও একই কথা বলা

হয়েছে। কমিটি বলেছে, বিবিএস যে পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি নিরূপণ করে, তা সঠিক নয়।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা মূল্যস্ফীতি নয়, দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও দ্রব্যের যেই পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা কমাতে না পারলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেকটাই কমে এসেছে। এখন বাংলাদেশে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে কিছু টাকা ছাড়া হয়েছে, সেগুলোকে দ্রুতই তুলে নিতে হবে। এটা স্থায়ী হলে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আর দীর্ঘদিন থেকেই আমাদের বাজারে প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের বাজার কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। তারা যদি সিন্ডিকেট বা সরবরাহে ঝামেলা করে, তাহলে মূল্যস্ফীতিতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এজন্য সরকারকে বিষয়টির দিকে নজর রাখতে হবে। আগামী বোরো মৌসুমে খাদ্যপণ্যগুলো ঠিকভাবে ঘরে তোলা গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, বাজারে এমনভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে যে, ট্যাক্স কমিয়েও নিত্যপণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি বন্ধ করা যায়নি। দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি।

একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরো বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট দেয়া হবে। এছাড়া দেশের যেসব এলাকায় সড়ক বেহাল দশায় আছে ও চলাচলে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সে সব বিষয় জানাতে স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমি এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ডিও লেটার দিয়ে বলেছি বিভিন্ন এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রস্তাব পাঠাতে। কেননা এখন স্থানীয় পর্যায়ে এমপি নেই। আছেন শুধু আমলা আর উপদেষ্টারা। তাই উপদেষ্টারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। রাস্তাঘাট কোথায় কী সংস্কার দরকার সেসব সমাধান করা হবে। তিনি জানান, আমরা বাজেট ঘাটতি সহনীয় রেখে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনের কাজ করছি।

একটি প্রকল্পের বিষয়ে বলতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে প্রচুর গ্যাস মজুত আছে। আগের সরকার কেন এগুলোয় গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজি এবং কয়লা আমদানির প্রতি ঝোঁক দিয়েছিলেন, সেটি বড় প্রশ্ন। আমরা আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মেনেই গ্যাস অনুসন্ধান এবং কূপ খননের কাজ করব। যতটা পারি এ কাজ অব্যাহত রাখা হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতে আমরা কোনো নিয়ম ভাঙতে চাই না। তবে গ্যাস উত্তোলনে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার।

তিনি বলেন, এখন থেকে যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হলে প্রকল্প তৈরির সময়ই পরিবেশ অধিদপ্তরের লোককে রাখতে হবে। যাতে তারা দেখতে পারে এই প্রকল্প যতটা সম্ভব কম পরিবেশের ক্ষতি করে করা যায়। আবার যতটুকু ক্ষতি হবে লাভ যেন তার চেয়ে বেশি আসে। সেটি না হলে দেখা যায় প্রকল্প তৈরির পর পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত নেয়া হয়। তারা শুধু ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলে দেয়। এটাতো কিছু হলো না।

একনেক সভায় গতকাল প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান, উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের তিন প্রকল্পসহ ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে মৌলভীবাজারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদী বন্দর নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প ‘আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ’ প্রকল্প ও ‘কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ প্রকল্প; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কর্তন, পুনঃবাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন’ প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প ‘ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন’ প্রকল্প, ‘রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ প্রকল্প ও ‘২ডি সাইসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ অ্যান্ড ৯’ প্রকল্প; মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন’ প্রকল্প এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (৪র্থ সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। এছাড়া, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অনুমোদিত ৬টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেকের সদস্যদের অবহিত করেন।

একনেক বৈঠকে অর্থ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App