বাড়ছেই চালের দাম, মাছ-মাংস নাগালের বাইরে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
কর অব্যাহতির পরেও চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। কয়েক সপ্তাহ ধরে বেড়েই চলছে। মিনিকেট চালের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যান্য চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
অন্যদিকে মাংসের দামও ক্রেতার নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত বছরের নভেম্বর মাসে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে এনবিআর। তবুও চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বছিলা, মুহাম্মদপুর, কারওয়ান কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি মিনিকেটের দাম ছিল ৭৫ টাকা, যা গতকাল ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর দুই সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি নাজিরশাহ চালের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা, শুক্রবার তা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৬ টাকায়। ২ থেকে ৫ টাকা দর বেড়ে কেজিপ্রতি বিআর-২৮ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়, ৩ টাকা বেড়ে মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়, পুরোনো আটাশ ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়।
বছিলা বাজারের বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের মালিক আলী মিয়া বলেন, আমনের মৌসুম চলছে। ভারত থেকেও চাল আসছে। তবু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের। তাই খুচরায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মুহাম্মদপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী কাওসার বলেন, কয়দিন আগে নতুন ক্ষেত থেকে ধান উঠানো হয়েছে। মিলাররা দর বাড়াচ্ছেন। রমজান সামনে রেখে তারা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। মিল পর্যায়ে তদারকি প্রয়োজন।
রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেশে আমনের ভড়া মৌসুম চলছে। কৃষকের নতুন চাল বাজারে এসেছে। বিক্রিও হচ্ছে। সঙ্গে ভারত থেকেও আমদানি করা চাল বাজারে এসেছে। এতে বেড়েছে সরবরাহ। চাহিদার তুলনায় কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, মিল থেকে হঠাৎ করে সব ধরনের চাল ৫০-১০ টাকা কেজিপ্রতি বাড়িয়েছে।
এদিকে মাছ ও মাংসের দামও ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ ধরে এই উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পাশাপাশি সাদা লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা।
আর পাঙাসের কেজি ২০০-২২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এছাড়া প্রতিকেজি রুই মাছ ৩০০-৩৫০, বড় কাতল ৪৫০, ছোট কাতল ৩৫০, কার্প মাছ ২৮০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০, চাষের কৈ ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০, চিংড়ি ৮০০, মলা মাছ ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় দামে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। শুক্রবার প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, গোল বেগুন ৫৫-৬০ টাকা, প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। কেজিপ্রতি শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে অন্যান্য সবজার দাম এখনো ৫০ টাকার বেশি। বাজারে করলা প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পাকা টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
মোহাম্মদপুর বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা এক বীমা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রিপন হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিসপ্তাহে কোন না কোন পণ্যের দাম অস্থিরতা থাকেই। এখন সবজির দাম একটু কমাতেই চাল-মাংসের দাম বাড়তি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে। কিন্তু ভোক্তা এ থেকে কোনো সুফল পাচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে সেই স্তরে মনিটরিং হয় না। ফলে অসাধুরা এই সুযোগে ভোক্তাকে বেশি করে নাজেহাল করে তোলে। আর কয়েকমাস পরই রোজা শুরু হবে। এখন থেকেই যদি বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো না হয়, ক্রেতারা আরো ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।