গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিতের দাবি ব্যবসায়ীদের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত
শিল্পখাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি প্রতিযোগীতামূলক ও টেকসই মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে এক চিঠিতে এ আহ্বান জানান কয়েক ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
যৌথভাবে এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন- বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ।
চিঠিতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলেছে, শিল্পখাতে বিরাজমান গ্যাসের সংকট মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ (যেমন- সিএনজি ষ্টেশন হতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা) এবং নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ (জ্বালানি নিরাপত্তা) নিশ্চিত করার জন্য মধ্য-দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়।
শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে উপরোক্ত সুপারিশগুলো সরকারের সঙ্গে বিশদ আলোচনার জন্য এবং প্রয়োজনীয় আরো তথ্য সরবরাহ করতে সংগঠনগুলো প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
চিঠিতে আশঙ্কা করা হয়, সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হতে পারে। এরূপ মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর করা হলে তা শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বর্তমানে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমাদের কারখানাগুলো গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং ব্যাপক আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছে। আমাদের শিল্পঘন এলাকাগুলোতে, বিশেষ করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের কারণে ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে কারখানাগুলোর প্রোডাকশন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এর প্রভাবে পোশাক খাতে সময়মত কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে, লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যখন শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তখন শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তার সুফল শিল্প পায়নি বলে জানান তারা।
বিনিয়োগ স্থবিরতার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বস্ত্র ও পোশাকখাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৮.৯৫ শতাংশ এবং বস্ত্রখাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৮.১১ শতাংশ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চলমান মিল ও কারখানাগুলোকে সংকটে ফেলবে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রাক্কালে যখন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তখন এরকম একটি উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।