জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০২:২৬ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৩০ তারিখ থেকে আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাব। আর ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন ও আন্দোলন করবো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে টানা তৃতীয় দিনের মতো অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতির অবস্থান কর্মসূচিকালে একথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক মোতাহার আরো বলেন, আমরা যারা চাকুরি শেষে পেনশনে যাব, আমরা আর কোনো পেনশন পাব না। কিন্তু আমরা এ অযৌক্তিক স্কিম এর অন্তর্ভুক্ত হতে চাই না। আমরা তাই শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সর্বাত্মক আন্দোলন জারি রাখবো। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবির আদায় না হওয়া পর্যন্ত পিছপা হটবো না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার ও জারিকৃত প্রজ্ঞাপন তুলে না নেয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবো না। কোনো শিক্ষক তাদের দায়িত্ব পালন করবে না। একাডেমিক হোক বা গবেষণা হোক আমরা কোথাও অংশগ্রহণ করবে না। প্রক্টর তার দায়িত্ব পালন করবে না, ডিনরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে না, বিভাগের সভাপতি ক্লাসে আসবে না। কিন্তু আমরা আন্দোলন সফল করেই ছাড়বো। আপনারা চাইলে ফেডারেশন আমরা স্বতন্ত্রভাবে শুধু জাহাঙ্গীরনগরে আন্দোলন জারি রাখবো।
এসময় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা। দ্রুততম সময়ে এ পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। এসময় তারা জোর হুশিয়ারি দেন যদি ৩ অর্ধদিবস কর্মবিরতি চলাকালীন সময়ে তাদের দাবি মেনে নেয়া এবং অর্থ-মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করা হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন ও পূর্ণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আইরিন আক্তার বলেন, আমাদের যে অধিকার তা থেকে বঞ্চিত না করে যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার আহবান করছি সরকারকে। তা না হলে শিক্ষকদের সম্মানহানি করা হবে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলনের সাথে আছি । আমরা আশা করি আমরা সকল শিক্ষিকরা একাত্ম হয়ে এগিয়ে যাব, এর ফল ভালো কিছু হবে।
তৌহিদ শিশির বলেন, আমাদের পেনশন নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন হয়েছে সেটা এ পর্যন্ত আসার কথা ছিল না। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাদের শিক্ষকেরা আগের মতো সম্মান দিচ্ছে না। অথচ বঙ্গবন্ধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকদের যে সম্মান দিয়েছে।
আরো পড়ুন : অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির হুঁশিয়ার হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির
আর এই সার্বজনীন পেনশন স্কিম একটা বড় ফাঁদ। আমরা শিক্ষকেরা কখনোই এই ফাঁদে পা দিব না। আমাদেরকেই কেন এর অন্তর্ভুক্ত করা হলো, অথচ যারা এই প্রজ্ঞাপন জারি করলো তারা এর অন্তর্ভুক্ত নেই।
গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুর রব বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির তত্ত্বাবধানে যৌক্তিক আন্দোলন করে যাব। আমরা আমাদের দাবিতে অটল থেকে আন্দোলন করে যাব।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, আমরা বেশি কিছু চাই না, আমাদের শুধু চাওয়া সম্মান। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে সম্মান দিয়ে গেছেন তা যেন কেউ বিনষ্ট না করে। আমরা চাই, সম্মানঅজনকভাবে যেন জ্ঞান চর্চা করতে পারি, দেশ ও জাতিকে শিক্ষিত করার যে গুরুদায়িত্ব আমাদের উপর তা রক্ষার জন্য শিক্ষকদেরকে সম্মানহানি করা যাবে না। অথচ আমাদের যে ফেডারেশন আছে তাদেরকে বাইরে রেখে অত্যন্ত সুচতুরভাবে আমাদেরকে পেনশন স্কিম এর অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে। কিন্তু শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকেই এর অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছ কিন্তু আমলারা কেউ এর মধ্যে নেই।
তিনি আরো বলেন, আমরা যে সম্মাঞ্জনকভাবে পেনশন পেতাম সেটি যেন আবার ফিরে আসে। আমাদের যে চাওয়া সম্মান সেটি আমরা ফিরে পেতে চাই। এই সরকার এবং রাষ্ট্র যেন আমাদের প্রতি অবিচার না করে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে সম্মান না দিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ গড়া যে স্বপ্ন তা সম্ভব না। সরকারের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়। কারণ শিক্ষকরা যদি রাস্তায় নামে তাহলে এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। আমরা প্রত্যয় স্কিম থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।