রবিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা জাবি শিক্ষার্থীদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:২১ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে অন্যায্য আখ্যা দিয়ে তা বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের (ডেইরি গেইট) সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ বহাল রাখার তীব্র সমালোচনা করেন ও তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, “এখন যদি ৭১ থাকতো, মুক্তিযুদ্ধ হতো তাহলে আজকে যারা কোটার জন্য লড়ছে তারাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো, আর যারা কোটার জন্য লড়ছে তারাই দেখা যেত রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের দলে যোগ দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই ৭১—এ যারা লড়াই করেছেন তারা বৈষম্য দূর করার জন্য লড়াই করেছেন, এমন কোনো যোদ্ধা নেই যিনি এই বৈষম্য দূর করার জন্য যুদ্ধে লড়েছিলেন। তাই বলতে চাই ১৯৭১ সালে যে চিন্তাধারা থেকে যুদ্ধ হয়েছিলো, সেই চিন্তার সঙ্গে মিল রেখেই আমাদের এই আন্দোলন। হাইকোর্টের রায় পিছিয়ে দিয়ে কোনো লাভ নেই, যতদিন না রায় আমাদের পক্ষে আসছে ততদিন আমরা রাস্তায় থাকবো।”
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছে আর স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার মেধাবীদের যা বৈষম্যমূলক কোটা প্রথার মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিজেদের অধিকার আদায় ও বৈষম্যমূলক কোটা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না।”
আরো পড়ুন: বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ শাওলী বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি সবোর্চ্চ আদালত তার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আমাদের উপর নিপীড়ন করছে। ওবায়দুল কাদের বলছে এই আন্দোলনে জামায়াত—শিবির ভর করেছে। আমাদের ন্যায়ের আন্দোলনকে প্রতিহত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা এদেশের ক্ষমতাসীন চক্র করে যাচ্ছে। আমরা এতে পরাস্ত হবো না। কারণ আমরা এদেশের মানুষ, এটি আমাদের অধিকার।’
মানববন্ধনে তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, “আজকে একদল ষড়যন্ত্র করে বলতে চায় আমাদের নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নাই, আমরা তাদেরকে বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো সেটাই যে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো বৈষম্য দূর করার জন্য, আজকে যে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ঢাল করে, সেই বৈষম্যকে আবার এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা বলছি যারা এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে বলছে তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা ধারণ করি, আমরাই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।”
আহ্বায়ক আরিফ সোহেল আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, “আমরা আজ (শনিবার) প্রত্যেকটি হলে হলে গিয়ে গণসংযোগ চালাবো। পরদিন রবিবার আমরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত অবরোধ করবো। আপনারা ছাত্র ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দিন। শিক্ষকদের আন্দোলন শেষ করে তারা ক্লাসে ফিরলেও যতদিন না আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে আমরা সমস্ত ক্লাস—পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো না।”
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৫% কোটা তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। পরে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে রায় দেন হাইকোর্ট।