ঢাবির জহুরুল হক হলে অভিযান, দুটি হেলমেট জব্দ

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:১১ এএম

অভিযানে একটি রুম থেকে দুটি হেলমেট জব্দ করা হয়েছে। ছবি : ভোরের কাগজ
ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা ও হলে বহিরাগত দমন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বিভিন্ন রুমে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলে এই অভিযান পরিচালনা করেন হলের আবাসিক শিক্ষকরা।
এতে প্রধান ভবনের ৩৬৪ নম্বর রুমে শরীফ আহম্মেদের সঙ্গে এক বহিরাগত পাওয়া য়ায়। ওই রুম থেকে দুটি হেলমেট জব্দ করা হয়েছে। শরীফ আহম্মেদ আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী ও হল শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী। তার রুমে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুক ছোট ভাইকে রাখতেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের পেটানোর জন্য বাইরে থেকে একজনকে রুমে হেলমেট ও স্ট্যাম্পসহ এনেছিলেন। তার রুমের আশেপাশের একাধিক শিক্ষার্থী এই অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তার রুমে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আবাসিক শিক্ষকদের বরাতে জানা যায়, কোটা আন্দোলনের চলমান ইস্যুতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হলের বিভিন্ন রুমে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে হলের ৩৬৪ নম্বর রুমে স্থায়ীভাবে একজন বহিরাগত শিক্ষার্থী থাকা ও আরেকজন অস্থায়ী বহিরাগতের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে সেখানে গিয়ে আশেপাশের রুমে থাকা শিক্ষার্থীদের দেয়া 'কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পেটানোর জন্য একজন বহিরাগত হেলমেট ও স্ট্যাম্প নিয়ে ওই রুমে আসে' এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই রুম থেকে দুটি হেলমেট জব্দ করা হয়। একজন স্থায়ী বহিরাগত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
আরো পড়ুন : প্রতিবাদে রাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
পরে শরীফ আহম্মেদকে হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুক ছোট ভাইকে রুমে না রাখার শর্ত দেয়া হয়। এসময় তার হেলমেট দুটি ফেরত দেয়া হয়।
জানতে চাওয়া হলে শরীফ আহম্মেদ বলেন, আমার ছোটোভাইকে কোরবানির ঈদের পর থেকে এনে রেখেছিলাম। তাকে এই মুহূর্তে হলে না রাখার কথা বলেছেন স্যার।
স্ট্যাম্প ও হেলমেটসহ বহিরাগত এনে কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি। মাঝেমধ্যে রুমে অনেকেই আসে। সকালে ধানমন্ডি থেকে আমার রাজনৈতিক ছোট ভাই এসেছিল। পরে বিকেলে চলে গেছে। তবে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়।
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রহীম বলেন, সোমবার প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে হলে বহিরাগত যাতে না থাকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন রুমে গিয়ে অভিযান চালিয়েছি। হলে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আর একটি শরীফের রুমে তার ছোট ভাই স্থায়ীভাবে থাকে। তাকে বলেছি আগামীকালের মধ্যে যেন তাকে কোনো আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানই আমাদের মূল লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরি সভায় কোটা আন্দোলনে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মারামারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রতিটি হলে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করাসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাকি সিদ্ধান্তগুলো হলো, শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন; হলসমূহে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; যেকোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকবে এবং সকলকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকবে।