উত্তপ্ত আইইউটি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন দাবিতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আন্দোলন টানা তৃতীয় সপ্তাহে পড়লেও দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন তারা। এরকম পরিস্থিতিতে ওআইসি’র একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের সামনেও দাবিগুলো উত্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গত ২৩ নভেম্বর একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের তিনজন ছাত্র মারা যায়। এরপর থেকেই তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেছেন, কিছু শিক্ষকের অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং প্রশাসনের একটি অনুমোদনহীন সিন্ডিকেটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তারা বলছেন, অবহেলার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বরখাস্ত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (এমপিই) বিভাগের বার্ষিক পিকনিকে যাওয়ার পথে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের বহনকারী একটি দ্বিতল বাস ১১ কেভি বৈদ্যুতিক লাইনের সঙ্গে ধাক্কা খেলে দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে তৃতীয় বর্ষের তিনজন শিক্ষার্থী মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় এবং পাঁচজন আহত হয়। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং কিছু শিক্ষক চরম অসংবেদনশীলতা এবং দায়িত্বহীনতা দেখিয়েছেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে বিভাগীয় প্রধানের কিছু মন্তব্যে শোকসন্তপ ছাত্রদের কাঁধে দোষ চাপানো হয়। একইরকম অসংবেদনশীল বক্তব্য এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ অফিসের প্রধানের কাছ থেকেও।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল, রুটিন প্রকাশ
এর ফলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চলুক’ বা নামে পরিচিত একটি কথিত অ-অনুমোদিত শিক্ষক ফোরাম রয়েছে। বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী এই ফোরামের কিছু ফ্যাকাল্টি সদস্য (যেটি ফোরাম ‘সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত) প্রশাসনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখে এবং প্রায়ই ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত সুবিধার জন্য নানা সিদ্ধান্ত হেরফের করে থাকে। তারা অভিযোগ করে, এই সিন্ডিকেট শিক্ষার্থী-বান্ধব উদ্যোগগুলোকে বাধা দেয় সিন্ডিকেটের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। এই গ্রুপকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়া কর্তৃপক্ষ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। এর প্রতিবাদে, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে প্রশাসনিক ভবনে শুধুমাত্র উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার ঢুকতে পারছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ফ্ল্যাশলাইট মিছিল, র্যালি, ক্লাস বয়কটসহ আরো অনেক কর্মসূচি পালন করেছেন। এর আগে, শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি পেশ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে রয়েছে অসদাচরণ ও অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত অনুষদ ও স্টাফ সদস্যদের বরখাস্ত করা। একইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, আর্থিক জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং একাডেমিক অনিয়মে যারা জড়িত তাদেরও বরখাস্ত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের তৈরি করা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, এমপিই বিভাগের অধ্যাপক আরাফাত আহমেদ ভূঁইয়া। পিকনিক সমন্বয়কারী হিসাবে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য তাকে বরখাস্ত করতে হবে। এমপিই বিভাগের প্রাক্তন প্রধান প্রফেসর ড. মো. হামিদুর রহমান। তিনি শিক্ষার্থীদের নানা কারণে হয়রানি করে থাকেন। দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দায়িত্ব অপব্যবহার করার জন্য প্রফেসর ড. মো. আবু রায়হান, ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজাউল হক খান, শারীরিক নির্যাতন, আর্থিক অনিয়ম এবং অনৈতিক আচরণে জড়িত থাকায়, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তসলিম রেজা, টিভিই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন খান, বিটিএম বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, শারীরিক ও যৌন হয়রানির অভিযোগে ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম, একাডেমিক চুরির অভিযোগে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম, চিকিৎসায় অবহেলার মেডিকেল অফিসার ডা. আলী তারেক, শারীরিক নির্যাতনের দায়ে মো. গোলাম কিবরিয়া আব্বাসী এবং সহকারি হল সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম মজুমদার।