প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোরের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৪ পিএম

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ছবি : সংগৃহীত
বাংলার আকাশে সুরের জগতের এক কিংবদন্তির নক্ষত্র পতন ঘটে আজ। সবাইকে কাঁদিয়ে ২০২০ সালের এই দিনে মারা যান ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোর। শনিবার (৬ জুলাই) এন্ড্রু কিশোরের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে গেয়েছেন কয়েক হাজার গান। তার মধ্যে জনপ্রিয় গানের সংখ্যা যে কত; তাও গুনে শেষ করা যাবে না। তার কণ্ঠ নিঃসৃত গান শোনেনি, বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। সিনেমার গানে তো তিনি অদ্বিতীয়। সেজন্যই তাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। তিনি হলেন কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোর।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বরে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের এই গায়ক। সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা গানের কিংবদন্তি এ শিল্পী ছয় বছর বয়স থেকে সঙ্গীতের তালিম নেয়া শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল, রবীন্দ্র, লোকসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান শাখায় তালিকাভুক্ত হন।
তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ প্রভৃতি।
এন্ড্রু কিশোরের বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি। তার মা ছিলেন সঙ্গীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সঙ্গীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর।
আরো পড়ুন : কেন অভিনয়ে নেই শাবানা, জানালেন নিজেই
এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন। ‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি।
১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। গানগুলো— ‘আমার সারা দেহ..’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের..’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে। ভারতের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আর ডি বর্মণের সুরে ‘সুরজ’ নামে সিনেমায় এন্ড্রু কিশোর হিন্দি গান গেয়েছিলেন। এছাড়া, তার সুরে আরো দুটি বাংলা গান করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এ দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক। গান গেয়ে এন্ড্রু কিশোর আকাশছোঁয়া খ্যাতি পেয়েছেন। সেই সঙ্গে জিতেছেন বহু পুরস্কারও। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।