সহজেই রাজনৈতিক আশ্রয় মিলে ইউরোপের যে দেশগুলোতে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩১ এএম

ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন অনেক বাংলাদেশি।
প্রতি বছরই অনেক বাংলাদেশি নাগরিক ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা-সহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০২৩ সালে ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশীর আবেদনের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে।
গত বছর ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ভুক্ত বিভিন্ন দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন ৪০ হাজার ৩৩২ জন। এর মধ্যে অনুমতি মিলেছে দুই হাজার জনের। এর অর্ধেকেরও বেশি আবেদন পড়েছে ইতালিতে। ৫৮ শতাংশ বাংলাদেশি সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এর পরেই রয়েছে ফ্রান্স। ওই দেশটিতে অনুমতি চেয়েছেন ২৫ শতাংশ।
ইইউ-র রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক সংস্থা ইইউএএ ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রবণতা সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ আবেদন করেছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আফগানিস্তান। বিগত বছরের নিরিখে দেশ দুটির অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়েছে এক ধাপ। ২০২২ সালে তুলনায় আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার বেড়ে যাওয়ায় ষষ্ঠ অবস্থানে উঠে এসেছে দেশটি। সিরিয়া-আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে যুদ্ধ-সংঘাত বিপুল সংখ্যায় আশ্রয় প্রার্থনার একটা বড় কারণ। পৌনে দুই লাখের বেশি সিরিয়ান শরণার্থী ইউরোপে আশ্রয় চেয়েছেন। বেশির ভাগের আবেদনই মঞ্জুর হয়েছে। আর আফগানদের আবেদন পড়েছে এক লাখ ১৪ হাজার। যার ৬০ শতাংশের বেশি গৃহীত হয়েছে।
কিন্ত, তালিকার ওপরের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান কেন? কেনই বা বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন ক্রমশ বাড়ছে?
রেকর্ড সংখ্যক আবেদনের সম্ভাব্য কারণ
ইইউএএ-র পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে নয় হাজার ২৯০ জন বাংলাদেশি নতুন করে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেন। ওই বছর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল আগের ১৩ হাজারেরও বেশি নথি। পরবর্তী কয়েক বছর ওঠানামার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আবেদনের সংখ্যা। ২০২১ সালে প্রথম বারের মত নথিভুক্ত হওয়া আবেদনের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৮৩৫ এ। ২০২২ সালে এ সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার বেড়ে ৩১ হাজার ৯৬৫ হয়। গত বছর আবেদন করা ৪০ হাজারের মধ্যে নতুন আবেদনকারী ৩৮ হাজারের ওপর।
অভিবাসন সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট বা 'রামরু'-র চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী এর কারণ হিসেবে দুটো বিষয়কে উল্লেখ করছেন।
আরো পড়ুন : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে যে বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘বৈধভাবে অভিবাসনের সুযোগ সীমিত হলেও কিন্তু সে সব দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ফলে, অবৈধ পথে হলেও অনেকেই যেতে চান।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর যেহেতু নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল, বিরোধী মনোভাবের যারা মনে করেছেন তাদের ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বা জেলে যাওয়ার ভয় আছে তাদেরও একটা অংশ হয়তো ইউরোপে পাড়ি দিয়ে আশ্রয় চেয়েছেন।’
গন্তব্য দেশগুলোর ভিসা পলিসির জটিলতার কথাও উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজ, যেমন ‘চেরি পিকিং’য়ের জন্য এক বছরের ভিসা দেয়া হচ্ছে। এই কাজ পাওয়ার জন্য অনেকে যাচ্ছেন। কিন্তু, অনেক খরচ করে গিয়ে এক বছরে সেটা তুলে আনা কঠিন হয়ে যায়। যে কারণে অবৈধ অভিবাসন উৎসাহিত হচ্ছে।’
ইতালিতে বসবাসরত সাংবাদিক জাকির হোসেন সুমন বিবিসি বাংলাকে জানান, ‘এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে প্রচুর। কোভিডে অনেক লোক মারা গেছে। শ্রমিকের অভাব রয়েছে। সেজন্য ইতালি সরকার ঘোষণা দিয়েও বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের আনছে।’