যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের আশঙ্কা
বাইডেন ও পুতিনের নতুন পদক্ষেপে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
ইউক্রেন রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার আগেই এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে।
মস্কো মনে করছে, তারা যুদ্ধের কৌশলগত লাভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে এবং বাইডেন তার সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথে পরিবর্তন আসতে পারে। বাইডেন প্রশাসন প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে এটিএসএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার অনুমতি দিয়েছে। একইসঙ্গে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে বাইডেন অ্যান্টি-পার্সনেল ল্যান্ডমাইন পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটাকমস মিসাইল সিস্টেম ১৯০ মাইল (৩০০ কিমি) দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম - ইন্টারনেট
উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার সেনার রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়ার কারণে বাইডেন এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন। যা আমেরিকার জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত শিথিল করেছেন, ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় এখন আর সম্ভব হবে না বলে দাবি করছে রাশিয়া। গত তিন মাস ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অবিরত হামলা চালাচ্ছে এবং এ সপ্তাহের শুরুতে তাদের সবচেয়ে বড় আকাশ পথে আক্রমণ চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনের নিউ জিওপলিটিকস রিসার্চ নেটওয়ার্কের প্রধান মিখায়লো সামুস বলেছেন, সব কিছু একসঙ্গে ঘটছে। রাশিয়া শত শত ইস্কান্দার ও কিঞ্জাল ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ করছে, যাতে তারা ওয়াশিংটনে ক্ষমতা পরিবর্তনের আগে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে পারে। তিনি আরো বলেন, রাশিয়া তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেন ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সময় তাদের কৌশল আরো শক্তিশালী হয় এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি কঠিন হয়।
রাশিয়ার আক্রমণের ফলে কিয়েভ বুধবার (২০ নভেম্বর) আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলেও, রাশিয়া তাদের প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়া মনে করছে, আক্রমণ বাড়ানোর মাধ্যমে তারা কিয়েভকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলতে পারবে, যা ভবিষ্যতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সময় তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
ইউক্রেনকে সহায়তা করতে বাইডেনের এ সিদ্ধান্ত কিছু রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, এ যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং কেউ জানে না এর পরিণতি কোথায় যাবে।
রাশিয়া তার সামরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য ইউক্রেনে আবার বড় আকারে মিসাইল হামলা শুরু করেছে - ইন্টারনেট
রাশিয়ার নতুন পারমাণবিক নীতি অনুযায়ী, রাশিয়া এখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে যেসব দেশ শক্তিশালী দেশের সহায়তায় থাকে, তাদের বিরুদ্ধে। এটি একটি হুঁশিয়ারি, যেন পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারে তারা আগুনের সঙ্গে খেলছে, আর রাশিয়া কোনোভাবেই তার অবস্থান ছাড়বে না।
কিংস কলেজ লন্ডনের যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের গবেষক বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে, ট্রাম্প ক্ষমতা নেয়ার আগে রাশিয়া তাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। তবে, তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে পুতিনের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়া সম্ভব কিনা।
গত মঙ্গলবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের এক হাজার দিন পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ে রুশ বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো দখল করতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেছেন, মস্কোর পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এটা শুধু সময়ের ব্যাপার, ইউক্রেন একসময় রাশিয়ার হাতে চলে আসবে। তিনি আরো বলেন, আগামী বছর জানুয়ারিতে পুতিন একাধিক নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, কারণ ট্রাম্প তখন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসবেন এবং তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে বলেছেন, যদি আমেরিকা তাদের সামরিক সহায়তা কমিয়ে দেয়, তবে ইউক্রেন এ যুদ্ধে হেরে যাবে, তবে তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।’’
বাইডেনের সিদ্ধান্তের ফলে কিয়েভকে রাশিয়ার টেরিটোরিতে এটিএসএমএস হামলা শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও ট্রাম্প এখনো এ বিষয়ে কিছু বলেননি, তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, ‘‘এটা উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে এবং কেউ জানে না যুদ্ধ কোথায় নিয়ে যাবে।’’
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র অভিযোগ করেছেন, ‘‘বাইডেন তার বাবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার আগেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা করছেন।’’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘‘এক সময় একটাই প্রেসিডেন্ট থাকবে। যখন আগামী প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে আসবেন, তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
কিছু রিপাবলিকান বাইডেনের পদক্ষেপ সমর্থন করেছেন। তবে, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, ‘‘বাইডেনের দরকার ছিল ইউক্রেনকে সহায়তা করা, তবে তিনি এখানে রাজনীতি করেছেন।’’
পুতিনের সংশোধিত পারমাণবিক নীতির অধীনে মস্কো এখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে শক্তিশালী দেশের সহায়তায় থাকা দেশগুলোর বিরুদ্ধে।
রুশ আন্তর্জাতিক বিষয়ক কাউন্সিলের আলেকসান্দার এরমাকোভ বলেছেন, ‘‘এই পরিবর্তন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা।’’
তাতিয়ানা স্তানোভায়া বিশ্বাস করেন, ‘‘পুতিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চান না, তবে তিনি অবশ্যই পশ্চিমা বিশ্বকে বুঝাতে চান যে তারা আগুনের সঙ্গে খেলছে। জানুয়ারির পর কী হবে, তা কেউ জানে না।’’
ক্রেমলিনের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ট্রাম্প ইতোমধ্যে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তাদের ন্যূনতম দাবির বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। অপরদিকে, জেলেনস্কি তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
পুতিন জানিয়েছেন, ‘‘ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।’’ ইউক্রেনের সংবিধানে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
রয়টার্সকে রাশিয়ার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনের কিছু ক্ষুদ্র অঞ্চল ফিরিয়ে দিতে রাজি, তবে পুরো অঞ্চল তারা ছাড়বে না। ইউক্রেনের লক্ষ্য পুরো সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা, এবং তারা ক্রিমিয়া বা অন্য কোনো অঞ্চলের উপর রাশিয়ার দখল মেনে নেবে না।
মিখায়লো সামুস বলেছেন, ‘‘ইউক্রেনীয়রা যদি কয়েক বছর অপেক্ষা করেও, তবে তারা কখনোই ক্রিমিয়া বা রাশিয়ার দখলে থাকা কোনো অঞ্চল ছাড়তে রাজি হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন, তবে কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়া, অন্য কিছু হলে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে পারে, কারণ ইউক্রেনবাসী সেটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখবে।’’
এই যুদ্ধের পরিণতি এখন অনিশ্চিত, এবং বিশ্বের নজর এখন এই পরিস্থিতির দিকে।
সূত্র : বিবিসি
অনুবাদ : ইসলামুল হাফিজ নির্জন