গত ১৬ নভেম্বর ছিল চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী। তার হাত ধরে অভিষেক ঘটে কবরী, সুচন্দা, উজ্জ্বল, আহমেদ শরীফ, শর্মিলী আহমেদ ও ইলিয়াস কাঞ্চনের। সুভাষ দত্তকে নিয়ে এই তারকারা জানিয়েছেন তাদের অনুভূতি। তুলে ধরছেন মেলা প্রতিবেদক
কবরী
দত্ত দা’র হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আমার অভিষেক। আমার অভিনীত প্রথম ছবি যেমন সুতরাং ঠিক তেমনি দত্ত দা’রও প্রথম নির্দেশিত ছবি ছিল সুতরাং। সুতরাং ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে আমার অভিষেক ঘটে। এই ছবিতে আমার বিপরীতে তিনিই ছিলেন। এরপর তার নির্দেশনায় আবির্ভাব, বলাকা মনসহ আরো বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। সত্যি বলতে কি একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন দত্ত দা। তার কাছেই আমি অভিনয়ের আদ্যোপান্ত শিখেছি, জেনেছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল যে আমি যদি কখনো পরিচালক হই তবে সে ছবিতে তাকে অভিনয় করাব। ২০০৬ সালে আমি প্রথমবারের মতো নির্মাতা হিসেবে নির্মাণ করি ‘আয়না’ ছবিটি। দত্ত দাকে ছবিতে অভিনয় করার কথা বলা হলে তিনি প্রাথমিকভাবে না করলেও পরে অবশ্য আমার স্বপ্ন পূরণের কথা ভেবে এই ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। তিনি অভিনয় করেছিলেন বলে আমার অনেক সহযোগিতাও হয়েছিল।
শবনম
দত্ত দা’র সঙ্গে আমার পরিচয় হয় মুস্তাফিজ পরিচালিত হারানো দিন ছবিতে অভিনয়ের সময়। তিনিও এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এরপর দাদার সঙ্গে চান্দা ও তালাশ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছি। পরে আমি পাকিস্তানের ছবিতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে আর কোনো ছবিতে একসঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। মানুষ হিসেবে দত্ত দা ছিলেন একজন উদার মনের মানুষ। খুব হাসি খুশি মনের একজন মানুষ ছিলেন তিনি। খুব সহজেই মানুষকে হাসাতে পারতেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।

সুচন্দা
দত্ত কাকুর তার হাত ধরেই ‘কাগজের নৌকা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে আমার অভিষেক ঘটে। অভিনয় সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি আমাকে নায়িকা নির্বাচন করার পর অভিনয়ের আদ্যোপান্ত শিখিয়েছেন নিজ হাতে। চলচ্চিত্র সম্পর্কে আমি যা কিছু জেনেছি তাও শিখেছি দত্ত কাকুর কাছ থেকে। আমাদের দেশেতো আর অভিনয় শেখানোর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সে সময় ছিলই না। তিনিই আমার শিক্ষকের ভ‚মিকায় থেকে আমাকে অভিনয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়েছিলেন। আমি কাকুর কথা মনোযোগ দিয়ে যেমন শুনেছি ঠিক তেমনি পর্দায় নিজেকে সেভাবে উপস্থাপনও করার চেষ্টা করেছি। তার সঙ্গে আমার বাবা-মায়ের খুব চমৎকার সম্পর্ক ছিল, আমার ঠিক তেমনি ছিল। আমি যতদিন বাঁচব দত্ত দা’কে ততদিনই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব। কারণ তিনি এ দেশের চলচ্চিত্রের একজন কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আমার গুরু।
উজ্জ্বল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করে যখন আমি টিভিতে নিয়মিত নাটক করি তখন একদিন পরিচয় হলো দত্ত দা’র সঙ্গে। তিনি আমাকে বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল থেকে বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে যেতে বললেন। আমি ছবি নিয়ে একদিন হাজির হলাম। তার পছন্দ হলো। শুরু হলো ১৯৭০ সালে আমার প্রথম ছবি ‘বিনিময়’। বিপরীতে ছিলেন কবরী। এই ছবিটি প্রযোজনা করেছিলেন এই ছবিরই সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহার স্ত্রী রমলা সাহা। এরপর থেকে দাদা তার বেশ কয়েকটি ছবিতে আমাকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
শর্মিলী আহমেদ
রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসে প্রথম উর্দু ছবি ‘ঠিকানা’তে কাজ করি। এক সময় পরিচয় হয় নির্মাতা সুভাষ দত্তের সঙ্গে। তিনি তার বাংলা ছবি ‘আবির্ভাব’ এ আমাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখালেন। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ‘আবির্ভাব’ মুক্তি পেল। সুপার ডুপার হিট হলো ছবিটি। একজন নায়িকা হিসেবে আমিও ব্যাপক সফলতা পেলাম। তখন সবাই আমাকে শর্মিলী নামেই বেশি চিনতেন। এরপর দাদার নির্দেশনায় আলিঙ্গন, বসুন্ধরাসহ আরেকটি ছবিতে কাজ করি। তবে যেসব ছবিতে কাজ করেছি সবগুলোই দর্শকপ্রিয় হয়েছে।

আহমেদ শরীফ
দত্ত দাকে আমি পিতার মতোই শ্রদ্ধা করতাম। সব সময়ই তার কাছে যেতাম আমি এবং আমি যতবার তার কাছে গিয়েছি বা দেখা হয়েছে আমি তাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছি। আমাকে আহমেদ শরীফ হিসেবে গড়ে তুলার ক্ষেত্রে তার অবদানই সবচেয়ে বেশি। নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘স্বরলিপি’ ছবিতে আমি প্রথম অভিনয় করলেও দাদার নির্দেশনায় ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছবিতে আমি নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করি। এই ছবিতে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছি। এরপর দাদার নির্দেশনায় আমি সবুজ সাথী, ফুল শয্যাসহ আরো দুটো ছবিতে অভিনয় করেছি।
ইলিয়াস কাঞ্চন
আমার ‘সুবচন নির্বাসনে’ নাটকে অভিনয় দেখে তিনি আমাকে নায়ক হিসেবে বসুন্ধরা ছবিতে কাস্ট করেছিলেন। আমার স্বপ্ন ছিল নায়ক হওয়ার কিন্তু সুভাষ দত্তের হাত ধরেই আমি চলচ্চিত্রে আসব তা ভাবিনি। ‘বসুন্ধরা’ ছবিতে আমার বিপরীতে ছিলেন সুভাষ দত্ত। এরপর তার নির্দেশনায় ডুমুুরের ফুল, সহধর্মিণী, আবদার এবং সর্বশেষ ও আমার ছেলে ছবিতে অভিনয় করেছি। এই কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে একজন গুণী মানুষকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি আমি।