ড. ইউনূসের সঙ্গে আবদুলায়ে সেকের সাক্ষাৎ
আরো দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে আরো দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নতুন এ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত রবিবার বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নীতিনির্ভর ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৭৫ কোটি ডলার, যা মূলত বাজেট সহায়তা। বিনিয়োগ ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ২৫ কোটি ডলার । নীতিনির্ভর ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংকের দিক থেকে ৫টি ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবে সমঝোতা হওয়ায় আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৭৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন হতে পারে। বাকি ২৫ কোটি ডলার ঋণের শর্ত নিয়ে এখনো সমঝোতা হয়নি।
আবদুলায়ে সেক জানান, সরকারের সংস্কার, বন্যার প্রতিক্রিয়া, উন্নত বায়ুর গুণমান এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বব্যাংক এই অর্থবছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থায়ন জোগাড় করতে পারে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এবং যতটা সম্ভব সমর্থন করতে চাই। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক চাহিদাগুলোয় সহায়তা করতে চায়। এই পদক্ষেপটি প্রধান উপদেষ্টার উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বানের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে বলেন, বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমে নমনীয়তা রাখতে হবে এবং ১৫ বছরের চরম দুর্ব্যবস্থাপনার পর একটি নতুন যাত্রা শুরু করতে সহায়তা করতে হবে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে আমাদের নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আমি প্রস্তাব করব, আমাদের সাহায্য করুন। বাংলাদেশ
থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের কাছে চুরি করা সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশকে শূন্য দুর্নীতি সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়তে বিশ্বব্যাংকের দক্ষতা প্রয়োজন হবে।
পাচারের অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রæতি দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তথ্যের স্বচ্ছতা, তথ্যের সঠিকতা, কর সংগ্রহের ডিজিটালাইজেশন এবং আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তা করতে চায়। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের এ সুযোগ এসেছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একবার আমরা এটি হারালে, এটি আর কখনো ফিরে আসবে না।
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের বৈঠক : বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে চলমান ঋণের পাশাপাশি বাড়তি কিছু অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বৈঠক হয়। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ম্যাথিউ এ ভারগিস।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটা নিয়মিত ও ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য চেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের সংস্কারগুলোর জন্য সহায়তা দরকার। সহসা একটা বাজেট সহায়তা দরকার। তারল্য সহায়তা চেয়েছি। ওরা দিতে সম্মত হয়েছে। আমি চলমান প্যাকেজের বাইরে বাড়তি কিছু সাহায্য চেয়েছি। ওরাও দিতে সম্মত হয়েছে। মোটামুটি ইতিবাচক। ওরা বেশ খোলামনে আলোচনা করেছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা দু’বছর আগের সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এর মধ্যে বিদ্যুৎ-জ্বালানি আমদানি, মেগা প্রকল্পের জন্য চীন, রাশিয়া এবং দাতা সংস্থাগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে নতুন ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার ঋণের সুদহার পর্যালোচনা করছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
বিশ্বব্যাংকের কাছে দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি বিলিয়ন বা টাকার অংকের কথা বলব না। এই বছরের জন্য তারা একটা বাজেট সহায়তা দেবে। আমরা আরো কিছু প্রত্যাশা করেছি। কী কী প্রকল্প আমরা নেব, সে অনুযায়ী তা চূড়ান্ত হবে।
বিশ্বব্যাংক ঋণের সঙ্গে কোনো শর্ত দিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, শর্ত নয়, আমাদেরকে কতগুলো অ্যাকশন নিতে হবে। আমরা বলেছি যে, ওটা যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়। এমন অ্যাকশন নেয়া যাবে না, যেটা আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এবং পরে টাকাও দেবে না। তাহলে তো হবে না। তিনি বলেন, আমরা সোজাসুজি বলেছি যে, আমাদের সংস্কারের জন্য যেসব বিষয় বাস্তবায়নযোগ্য হয়- সেই ধরনের অ্যাকশন যেন আমাদের দেয়া হয়।