×

সরকার

ড. ইউনূসের প্রতি শার্লট জ্যাকমার্ট: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দিন

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম

ড. ইউনূসের প্রতি শার্লট জ্যাকমার্ট: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দিন

ছবি: সংগৃহীত

   

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের সুইস পাবলিক রেডিওর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক শার্লট জ্যাকমার্ট। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ভয়েসে এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শার্লট জ্যাকমার্ট বলেন,  আমি সবসময় বাংলাদেশকে ভালোবাসি। ২০০৪ সালে আমি প্রথমবার দেশটিতে গিয়েছিলাম। সেই থেকে ভালো লাগা আছে। সেসময় সেদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি সংবাদপত্র ডেইলি স্টারে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতাম। এর আগে কখনো পৃথিবীর ওই অংশে যাইনি। আমি যে দেশ থেকে গিয়েছিলাম, সেটির চেয়ে বাংলাদেশের সবকিছুই আলাদা ছিল। তবে ঢাকার রাস্তার কোলাহল, খাবারের গন্ধ, রাত নামলে রাস্তার ধারে আগুন আমি পছন্দ করতাম। দিনরাত , দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করা মানুষদের ভালোবাসতাম। কখনই তাদের হাসি ও উদারতা ভুলতে পারিনি। ঢাকায় রাস্তা ভুলে যেতাম। তারা আমাকে খুঁজে দিতে সাহায্য করতেন। এটা প্রায়ই করতেন।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তাই ২০ বছর পর দেশটি নিয়ে কথা বলছি। রানা প্লাজার বিপর্যয়ের সময় আমি সেখানে ছিলাম। ভুক্তভোগীদের জন্য আমার দেশে অর্থ সংগ্রহ করেছিলাম। বাংলাদেশে নিয়মিত সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতাম। উষ্ণ আতিথেয়তা নিতাম। দেশটিতে সবুজ মাঠ এবং ঘূর্ণায়মান পাহাড়ে ঘুরতে যেতাম। সুন্দরবন ভ্রমণে যেতাম। ওই সময় আমি বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখেছি। দেশটি ঘুরে এসে ঢাকার সৌন্দর্য নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। যদি কেউ চান সেটি পড়তে পারেন। সেই থেকে আমি বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু। 

খ্যাতনামা সাংবাদিক বলেন, গত আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব পান ড. ইউনূস। সবমিলিয়ে এটা আমার কাছে ভালো খবর ছিল। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াইয়ের জন্য আমি তার প্রশংসা করি। আমার ক্যারিয়ারে উনার দুইবার সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পেয়েছি। যখন নিজ দেশে তিনি সমালোচিত হয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য স্থানে তার পক্ষে আমি কথা বলেছি। আমার লেখনি দিয়ে তাকে রক্ষা করেছি। 

শার্লট জ্যাকমার্ট বলেন, তবে আমার রক্ত হিম হয়ে যায়; যখন আমি জানতে পারি, মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পরই ডজনখানেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি আমার প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুদের কয়েকজনকে বেআইনিভাবে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। হত্যার অভিযোগে অবৈধভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসর বলা হচ্ছে তাদের। এটা ন্যায়সঙ্গত নয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সব সাংবাদিককে ফ্যাসিস্ট বলছেন। তারা অতীতের সরকারকে উৎখাত করেছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ কাকে বলে এ নিয়ে এই তরুণের কোনো ধারণা নেই। সত্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সবসময়ই শক্ত পথে হাঁটতে হয়েছে। কারণ সবসময়ই একদিক থেকে বিপদ ছিল। শক্ত পথে হাঁটা সাংবাদিকদের ফ্যাসিস্টে পরিণত করে না। তাই তাদের কারাগারে পাঠানো এবং খুনি বলা যায় না। সর্বোপরি, আমার বন্ধু ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্তকে এ তকমা দেয়া যায় না। তাদের ফ্যাস্টিস্টের সমর্থক বলে আখ্যায়িত করা যাবে না।

প্রখ্যাত সাংবাদিক বলেন, দুর্ভাগ্যবশত ইতিহাসে সবসময় ভালো বলির পাঁঠা হয়েছেন সাংবাদকিরা। বিক্ষোভে নিহত শিক্ষার্থীদের হত্যার দায় পুলিশের চেয়ে নিরীহ সাংবাদিকদের ওপর চাপানো অনেক সহজ। অথচ তাদের গুলি করেছে পুলিশ।গত জুলাইয়ের শুরু থেকে আগস্টের মাঝামাঝিতে ঘটা হত্যাকাণ্ডের জন্য এখন পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচণা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ফলে সাংবাদিকদের হত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত করা যাবে না। 

শার্লট জ্যাকমার্ট বলেন, আমি নিজেকে প্রশ্ন করি-বাংলাদেশের সংবিধান কি সেই কাগজে লেখা মূল্যবান নয়? আর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড কিভাবে সম্ভব? কেন একজন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, আমার সাংবাদিক বন্ধুদের রক্ষা করেন না?

তিনি বলেন, আমিও বিভ্রান্ত-যে শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন এনেছে তারা কি একটি অধ্যায় পাল্টানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি? যদি তাই হয়-তাহলে কেন তারা পূর্বসূরিদের মতো একই ভুল করছে? সাংবাদিকদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করে তাদের কিছু করার নেই? সব সাংবাদিককে ভয়ভীতি দেখানো, মারধর করা, কারাগারে রাখা কি সঠিক?

স্বনামধন্য সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে নতুন অধ্যায় খুলতে চায়, আধুনিক গণতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চায়, তাহলে দেশটিকে এক নীতিতে কাজ করতে হবে। যার অর্থ-মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষা, বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপদ বোধ করা। শুধু যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা নয়। কারণ আপনারা এখন ক্ষমতায় আছেন। ভয় ও দমনের শাসন একবার এবং সবসময়ের জন্য বন্ধ করুন।

শার্লট জ্যাকমার্ট বলেন, আমি এখনো বাংলাদেশকে বিশ্বাস করি। এখনো এদেশকে ভালোবাসতে চাই, যেভাবে এত বছর ধরে করেছি। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করুন। তাদের মুক্ত করুন। উনাদের রক্ষা করুন, যাতে তারা আবার নিরাপদে কাজ করতে পারেন। যেমন- আমরা আমাদের দেশে করি।

তিনি বলেন, কারণ মুক্ত গণমাধ্যমের জনগণ যেকোনো প্রকৃত গণতন্ত্রের স্তম্ভ। যে কারণে আমরা সাংবাদিকদের গণতন্ত্রের চতুর্থ শক্তি বলি। আপনারা যদি এই চতুর্থ স্তম্ভকে ভয় পান এবং সাংবাদিকদের জেল দেন শুধু সাংবাদিক বলে, তাহলে আপনাদেরটা গণতন্ত্র নই। কখনই হবে না।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের কাছে প্রমাণ করুন, আপনারা সত্যিই বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতা উল্টাতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনারা বিশ্বের নানা কোম্পানি, এনজিও এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে বিনিয়োগ পাবেন। এটি সফল হলে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ও সম্মান অর্জন করবেন।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App