কেন জঙ্গি হতে চেয়েছিলেন, জানালেন কাশ্মীরের এমপি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম

নবনির্বাচিত বিধায়ক কাইজার জামশেদ লোন। ছবি : সংগৃহীত
ভারতের কাশ্মীরে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই কিশোর বেলার কাহিনী শোনালেন এক এমপি। তিনি জঙ্গি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই ধারণা বদলে দিয়েছিল একটি ঘটনা। জঙ্গি হতে চাওয়া সেই কিশোরের জীবনের মোড় কীভাবে ঘুরে গেল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই কাহিনীই শোনালেন নবনির্বাচিত বিধায়ক কাইজার জামশেদ লোন।
তিনি এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এন)-এর প্রার্থী হয়েছিলেন। লোলাব থেকে ভোটেও জিতেছেন। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই কিশোরের কাহিনী শোনালেন লোন।
সেই কিশোর আর কেউ নন, বিধায়ক নিজেই। লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন সম্ভাষণ চলছিল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায়। সেই সময়েই বিধায়ক লোন বিধানসভায় তুলে ধরেন নিজের জীবনের কাহিনী।
তিনি জানান, তিনি তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। একদিন তাদের এলাকায় আচমকাই সেনা অভিযান শুরু হয়। গোপন সূত্রে সেনারা খবর পেয়েছিল যে, লোলাব এলাকা থেকে বেশ কয়েক জন যুবক জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছেন। তাদেরই খোঁজে চিরুনিতল্লাশি শুরু করে সেনাবাহিনী।
আরো পড়ুন : অশান্ত মণিপুর, স্বামীর সামনেই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা
বিধায়ক লোন জানান, সেই তল্লাশি অভিযানের সময় তাদের এলাকা থেকে সন্দেহের বশে ৩২ জনকে তুলে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
তাদের একের পর এক জেরা চলতে থাকে। ওই যুবকরা পরস্পরকে চেনেন কি না, তারা জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছেন কি না ইত্যাদি প্রশ্ন চলতে থাকে। সেই জেরা পর্বের সময় এক সেনা অফিসার লোনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে যুবক জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছেন, তাকে তিনি চেনেন কি না। ওই যুবক তার পরিচিত, উত্তরে এ কথা জানাতেই শুরু হয় মার।
লোনের কথায়, আমাকে বেধড়ক মারা হয়। তার পর জিজ্ঞাসা করা তল্লাশি অভিযানের সময় ওই যুবক জঙ্গি এলাকায় ছিল কি না। কিন্তু আমি যখন বললাম জানি না, তখন আবার মারা শুরু হল।
এই ঘটনা যখন চলছিল, সেই সময় সেখানে হাজির হন সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা। লোন বলেন, ওই সেনা কর্মকর্তা আমার কাছে আসেন। জিজ্ঞাসা করেন, বড় হয়ে কী হতে চাই। তখন তাকে সটান বলেছিলাম, জঙ্গি হতে চাই।
তিনি জানান, একটি ছোট ছেলের মুখে এ কথা শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলেন ওই সেনা অফিসার। কেন তিনি জঙ্গি হতে চান, এর কারণও জিজ্ঞাসা করেন ওই অফিসার।
লোনের কথায়, তখন তাকে আমি বলেছিলাম, সেনাবাহিনী খুব অত্যাচার করে। আমার ওপরেও অত্যাচার হয়েছে। সেই অত্যাচার দেখেই জঙ্গি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জঙ্গি হতে চাওয়ার ব্যাখ্যা শুনে ওই সেনা অফিসার তখন তার সামনেই তার অধস্তন কর্মীকে ধমক দেন। ঘটনাচক্রে, সেই অধস্তন কর্মীই মারধর করেছিলেন বলে দাবি লোনের।
এক কিশোরকে সমর্থন করে, তার পাশে দাঁড়িয়ে অধস্তন কর্মীকে ধমক দেয়ার বিষয়টি বেশ ভালো লেগেছিল তার, এমনই জানিয়েছেন লোন। আর সেই একটি ঘটনাই তার জঙ্গি হওয়ার ইচ্ছাকে দমিয়ে দিয়েছিল। আর সেখান থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
বিধায়ক লোন আরো জানান, যে ৩২ জনকে সেনারা সেদিন তুলে নিয়ে গিয়েছিল, ঘটনাচক্রে সেই ৩২ জনের মধ্যে ২৭ জনই পরে জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানতে পারেন তিনি।