ঐতিহাসিক গণিত-সভা বাতিল, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে বরাহনগরের শিক্ষার্থীরা হতাশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:১৫ পিএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও চলছে। এ কারণে কলকাতায় নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা! যুদ্ধ আর কূটনীতির চক্রে গর্বিত হওয়ার মুহূর্তকে কাছ থেকে অনুভব করতে পারলেন না ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ গণিতবিদ। এর মধ্যে তিনজন রয়েছেন বরাহনগরের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) শিক্ষার্থী।
ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অব ম্যাথামেটিশিয়ানস (আইসিএম) হলো গণিতের জগতে সবচেয়ে সম্মানিত প্রতিযোগিতা। ১৮৯৭ সালে প্রথম সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে হয়েছিল এই সমাবেশ। তখন থেকে প্রতি চার বছর পর পর রোম, বার্লিন অথবা অন্য কোথাও গণিতচর্চার সমাবেশ হয়। আগামী দিনে কোনদিকে যাবে অঙ্ক নিয়ে গবেষণার এ দিশা, তাও আলোচনায় চূড়ান্ত হয়েছে এখানে। এ বছর গণিতের সেই ‘বিশ্বকাপ’-এর আসর বসার কথা ছিলো রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
এমন সমাবেশে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ পাওয়া মানে এক অর্থে ‘হল অব ফেম’-এ যোগ দেয়ার মতো সম্মান অর্জন করা। বিশ্বজুড়ে এমনই মনে করা হয়। বিশ্বের বিখ্যাত গণিতবিদরা এ কংগ্রেসে বিভিন্ন সময়েযোগ দিয়েছেন। এ বছর সেখানেই একসঙ্গে ডাক পেয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাঁচ গণিতবিদ। তাদের মধ্যে তিনজন হলেন নীনা গুপ্ত, মালবিকা প্রামাণিক এবং মহেশ কাকড়ে আবার বরাহনগরের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) সাবেক ছাত্র।
কলকাতা এমন আমন্ত্রণ সচরাচর পায় না। বিশ্বখ্যাত গণিতবিদদের ভিড়ে মিশে বরাহনগর আইএসআইয়ের নাম উজ্জ্বল করতেন তিন তারকা গণিতবিদ। ফলে আইএসআইয়ের গর্বের অন্ত ছিল না।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ সে গর্ব করতে দিলো না আইএসআইকে। চলতি বছরের ৬-১১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সেই অধিবেশন রাশিয়ায় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথামেটিক্যাল ইউনিয়ন’ (আইএমইউ)। তারা জানায়, যুদ্ধ যতদিনই হোক, রাশিয়ায় গণিতবিদদের এ সমাবেশ আপাতত হবে না।
এ এক প্রকার প্রতিবাদও বটে। আইএমইউয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে তারা। এ পরিস্থিতিতে সে দেশে কোনো সমাবেশ করা উচিৎ নয় বলেই মত দিয়েছেন আইএমইউয়ের সদস্যরা। সংগঠনটির ওয়েবসাইটে সমকালীন পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। ইউক্রেনের সব সহকর্মী ও নাগরিকের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা আছে।
এ পরিস্থিতিতে আইএমইউ রাশিয়ার বাইরেই ওই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনটির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, এ বছর সমাবেশের সবই হবে ‘অনলাইনে’।
আইএমসিতে আমন্ত্রিত নীনা গুপ্ত অনলাইনে সমাবেশ হওয়ার খবরে হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, আইএমসিতে এবারই প্রথম যোগ দেয়ার ডাক পেয়েছি। এমন সুযোগ সবসময় আসে না। সমাবেশে কত অভিজ্ঞ গণিতবিদের সঙ্গে আলাপ হয়! নতুন গবেষণার পরিকল্পনা হয়। অনলাইনে সেসব কিছুই হবে না। সে কথা ভেবেই মন খারাপ হচ্ছে। আশা করি পরে আবার কখনও সুযোগ পাব।
যুদ্ধের যে এমন প্রভাবও পড়তে পারে কলকাতার ওপর, তা বোধহয় আগে কখনও ভাবেনি বরাহনগরের এ প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র। এতজন ভারতীয় গণিতবিদ আইএমসির মঞ্চে বক্তৃতা করলে নাম উজ্জ্বল হত তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও। কিন্তু ইউক্রেনে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের জেরে যে আহত হবে বরাহনগর, তা কে জানত।