সাম্প্রতিক চীন ভারতের সংঘাত নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব মিডিয়াতে ফলাও করে দেশ দুটির সামরিক শক্তি নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রধান মিডিয়া যখন সংঘাত নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে স্থানীয় কিছু মিডিয়া তখন সংঘাত উসকে দিতে নানান উত্তেজনাকর গল্পে পরিস্থিতি গরম রাখছে। তবে এতে করে এ অঞ্চলে চীনের যে আধিপত্যবাদ তা সামনে চলে আসছে।
সীমান্ত সেনা হত্যায় প্রাথমিকভাবে চীনকে বিজয়ী মনে করা হচ্ছে। তবে চীনের এ সাময়িক বিজয়ের আড়ালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব রাজনীতিনে নতুন এক পরশক্তি হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছেন বলে মনে করছেন কিছু বিশ্লেষক। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস করা দেশ দুটি বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে প্রতিযোগিতা করছে।
[caption id="attachment_141402" align="aligncenter" width="700"]

নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত[/caption]
গত কয়েক দশক ধরে দেশ দুটি শিক্ষা, ব্যবসা ও সামরিক খাতে ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। মধ্যবিত্তদের একটি স্থিতিশীল অবস্থান তৈরি সচেষ্ট রয়েছে উভয় দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতেও যথেষ্ট অবদার রয়েছে দেশ দুটির। দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও নতুন বাজার সৃষ্টি ও কাঁচামালের সরবরাহসহ অন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও পরিবেশ নিয়ে দেশ দুটির একই অবস্থান পরিলক্ষিত হয়েছে। তাছাড়া দেশ দুটির মধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৮৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একই পর্যায়ের প্রতিযোগিতা থাকার পরও জাতিসংঘে মানবাধিকারের প্রশ্নে দেশ দুটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগও রয়েছে।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে একই অবস্থানের পরও বর্তমানে যখন চীনের সঙ্গে সংঘাতের প্রশ্ন আসে তখন নরেন্দ্র মোদী কোন দিকটিতে আগ্রগামী থাকেন তা দেখা যাক। মোদী জানেন শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও চীন এখনই এ অঞ্চলে কোনো সংঘাতে যাবে না। চলমান উত্তেজনায় ইতোমধ্যে চীনের শেয়ার বাজারের অবস্থা দুর্বল করে দিয়েছে।
তাছাড়া চীন খুব সম্ভবত গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে। কেননা, ইতোমধ্যে করোনা ছড়ানোর অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে হংকংয়ে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে। চীনের মোবাইল কোম্পানি হাওয়াইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনা টেক কোম্পানিগুলো চাপে আছে। সে সুযোগে বাজার দখলে নিচ্ছে কোরিয়া-জাপানের কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রও এ সময়ে ইউরোপের সাথে চীনের বিরুদ্ধে জোট করার চেষ্টা করছে।
[caption id="attachment_204978" align="aligncenter" width="700"]

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মেলানিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে।[/caption]
এতো সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভারত তার সীমান্ত সংকটকে বিশ্ব দরবারে একটি বিশাল ইস্যু হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে বর্তমান উত্তেজনার মধ্যে চীনের বিপক্ষে লড়ার জন্যে বেশ কিছু শক্ত প্রতিপক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন মোদী। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াকে নিজেদের বলয়ে টানছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ে থেকে বড় অস্ত্রের চালান এনেছে ভারত। ফলে তাদের সাথেও সুসম্পর্ক রয়েছে ভারতের। অন্যদিকে জাপানও চীনের মোকাবেলায় এ অঞ্চলের একটি শক্তিশালী মিত্রের সন্ধান করছে অনেকদিন যাবত। যুক্তরাষ্ট্রও এ সুযোগে চীন সাগরে দুটি রণতরী পাঠাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে।
[caption id="attachment_229732" align="aligncenter" width="620"]

বিমানবাহী রণতরী[/caption]
সবদিক বিবেচনায় মোদী ভারতের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ পেতে মুখিয়ে রয়েছে। ফলে এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইসরাঈলসহ এসব দেশ ভারতের শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ফলে সব মিলিয়ে চীনের পক্ষ থেকে যে কোন পদক্ষেপ ভারতে দীর্ষ সময়ের জন্যে বিশ্ব রাজনীতিতে সামনে নিয়ে আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সমনের সময়ই বলে আঞ্চলিক এ উত্তেজনা কোন দিকে যায়। তবে চীনের প্রতিক্রিয়ার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে।