ইরানের যে ৯ ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকার বুকে কাঁপুনি ধরালো

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১০:১৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান বিশ্বে শক্তিমত্তার দিক বিবেচনায় ইরান অবস্থান বেশ সক্ত। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৪ সালের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম। সেই বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ধারে কাছেও নেই ইরান। তবুও দেশটির নাম শুনলেই মার্কিন নেতাদের হাঁটুতে কাঁপুনি ধরে। ভয়ে থর থর করে কাঁপে ইসরায়েলি নেতারাও। মধ্যপ্রাচ্যের এই বিষফোঁড়াকে কোনোভাবেই দমাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। বরং ইরান দিনকে দিন নিজেদের রণভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধ করছে।
ইকোনমিকস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পরম মিত্র ইসরায়েলকে টেক্কা দেয়ার মতো সাহস ও সক্ষমতা রয়েছে একমাত্র ইরানের। দেশটির হাতে এমন অন্তত ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যেগুলোকে ভয় পায় ইসরায়েল, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও। এক-একটি ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ঘণ্টায় ৯০১ কিলোমিটার থেকে প্রায় ১ হাজার ৯৯৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। তাই ইরানকে নিয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে।
সম্প্রতি বিষয়টি টের পেয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ায় ইরানি মিশনে হামলার জবাবে ৩০০-র বেশি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের আয়রন ডোমের সক্ষমতা বাজিয়ে দেখেছে তেহরান। তবে এটা তো কেবল ট্রেলার, আসল পিকচার তো এখনো বাকি আছে।
ইরানের ৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে সিজ্জিল অন্যতম। নব্বইয়ের দশকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা শুরু করে ইরান। এর দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার এবং ওজন ২৩ হাজার ৬০০ কেজি। সিজ্জিল ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটতে পারে। বহন করতে পারে ৭০০ কেজি বিস্ফোরক। ইরানের নাতাঞ্জ শহর থেকে ছোড়া হলে ৭ মিনিটেরও কম সময়ে তেলআবিবে আঘাত হানতে সক্ষম সিজ্জিল।
ইরানের তৈরি ‘খাইবার’-ও মধ্যম পাল্লার শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। ১ হাজার ৫০০ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। ১৯৮০-র দশকে খোররাম শহরে যুদ্ধ হয়েছিল ইরাক ও ইরানের। ইসলামের শুরুর দিকে খাইবার যুদ্ধের নামে এই খোররামশহর শ্রেণির চতুর্থ প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রাখা হয় খাইবার।
‘এমাদ’ ইরানের অস্ত্রশালায় আরেকটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় গিয়ে আঘাত হানতে পারে এটি। বহন করতে পারে ৭৫০ কেজি বিস্ফোরক। উত্তর কোরিয়ার নোডং ক্ষেপণাস্ত্রের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। পশ্চিম এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে এর নিশানায়।
উত্তর কোরিয়ার নোডং-১ ক্ষেপণাস্ত্রের অনুকরণে ‘শাহাব-৩’ তৈরি করেছে ইরান। মধ্যম পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ১ হাজার কিলোমিটার দূরে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে। বহন করতে পারে ১ হাজার ২০০ কেজি বিস্ফোরক। হালকা ওজন নিয়ে আরো দূরের লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। পরবর্তীতে চীনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এর উন্নতি ঘটানো হয়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস আইআরজিসি এই ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা করে।
‘শাহাব-৩এ’-তে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ‘গদর-১১০’ বা ‘কাদর-১১০’ তৈরি করেছে ইরান। তরল এবং কঠিন দুই ধরনের জ্বালানিতেই চলে এই ক্ষেপণাস্ত্র। ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় গিয়ে আঘাত হানতে পারে এটি। ৬৫০ থেকে ১ হাজার কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারে এই ‘গদর-১১০’। এর দৈর্ঘ্য ১৫.৫ মিটার থেকে ১৬.৫৮ মিটার এবং ওজন ১৫ থেকে ১৭ টন।
গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘পাভেহ্’ প্রকাশ্যে আনে আইআরজিসি। ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে পাভেহ। এই ক্ষেপণাস্ত্র একাই ইসরায়েলের বড় শহরগুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম। আইআরজিসির দাবি, শতভাগ নির্ভুলতার সঙ্গে আঘাত হানতে সক্ষম তাদের অপেক্ষাকৃত নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র।
ইরানের ভাণ্ডারে হাইপারসনিক অর্থাৎ শব্দের থেকে দ্রুত ছোটে এমন ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এর নাম ‘ফাত্তাহ্-২’। এর ইঞ্জিন চলে তরল জ্বালানিতে। ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে ফাত্তাহ-২। রাডারে ধরা পড়ার আগেই আঘাত করতে পারে এটি।
মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘খাইবার শেকান’ও কম যায় না। ২০২২ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রের কথা প্রকাশ করে আইআরজিসি। কঠিন জ্বালানিতে চলে এর ইঞ্জিন। ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে আঘাত হানতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র।
ইরানের তৈরি অন্যতম শক্তিশালী আরেকটি মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘হজ কাসেম’। রাডারে ধরা পড়ার আগেই ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে এটি। ৫০০ কেজি ভার বহনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় নিহত ইরানের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির নামেই এই ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ করা হয়েছে।
এদিকে বিগত কয়েক বছরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ড্রোন সক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছে ইরান। ফলে চিন্তা বাড়ছে পশ্চিমাসহ তাদের মিত্র দেশগুলোর।
উল্লেখ্য, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক, ও ইতালি। তবে ইরানের অস্ত্রভাণ্ডার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম হলেও, তা অনেক শক্তিশালী বলে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।