২৭ হাজার টাকা খরচ করে হয়েছেন এমপি, কে এই রশিদ!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ০১:১২ পিএম

শেখ আবদুল রশিদ। ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ২৭ হাজার টাকা খরচ করেছেন প্রচারে, জেলে বসে হারিয়েছেন ওমর আবদুল্লাকে! জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন জে অ্যান্ড কে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর। তিনি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেখানে নির্দলীয় প্রার্থী হয়ে জেলে বসে নির্বাচন করে তাকে প্রায় ৪ লক্ষ ভোটে পরাজিত করেছেন রশিদ। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও ভোটে লড়ে জিতেছিলেন রশিদ। শেখ আবদুল রশিদ জিতেছেন প্রায় চার লক্ষ ভোটে।
জয়লাভের পর রশিদের ছেলে আব্রার রশিদ বলেছেন- ‘এটি মানুষের জয়।’
তার বাবার প্রচারে কত টাকা খরচ করেছেন জানতে চাইলে আব্রার বলেন- ‘মাত্র ২৭ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে রশিদের প্রচারে। বাবার হয়ে প্রচারের দায়িত্ব সামলেছিলেন ২২ বছরের ছেলেই।’ খবর আনন্দবাজারের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নিজের হার স্বীকার করে নেন ওমর। জানান, ভোটাররা নিজেদের মতামত দিয়েছেন, গণতন্ত্রে এটাই সবকিছু। তিনি বিপক্ষকে অভিনন্দনও জানান।

টুইটারে এক পোস্টে ওমর লিখেছেন- ‘আমি বিশ্বাস করি না যে এই জয়ের ফলে তাড়াতাড়ি জেল থেকে মুক্তি পাবেন ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। এত উত্তর কাশ্মীরের মানুষের জনপ্রতিনিধি পাওয়ার যে অধিকার রয়েছে তা সহজে পূরণ হবে না। তবে ভোটাররা তাদের মতামত দিয়েছেন, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’
২০১৯ সালের ৯ আগস্ট থেকে তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন শেখ রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। প্রায় ৫ বছর হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রশিদের ছেলে আব্রার জানিয়েছেন, তার বাবার ভোটে জয় পাওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, আসলে তিনি নিরপরাধ। তাকে দ্রুত জেল থেকে মুক্তি দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

আব্রার জানিয়েছেন, যখন ভোটে লড়ার কথা তার বাবা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, পাশে কেউই ছিলেন না। ধীরে ধীরে বহু মানুষ এগিয়ে আসেন, পাশে দাঁড়ান। ক্রমে তিনি যখন মিছিল করতে শুরু করেন, সঙ্গে হাঁটতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ।
রশিদের ভোটপ্রচারে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। আব্রার জানিয়েছেন, তার গাড়িতে তেল ভরার জন্যই এই খরচ হয়েছে। গাড়ি চেপে তিনি বারামুল্লা কেন্দ্র প্রায় চষে ফেলেছেন। এর বাইরে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রচারে অনুদান দিয়েছেন, তাতেই এসেছে বিজয়।
অনন্তনাগ-রাজৌরি লোকসভা কেন্দ্রে হেরেছেন মেহবুবা মুফতি। পিডিপি নেত্রী জম্মু এবং কাশ্মীর রাজ্যের শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওই আসনে জয়ী হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা মিয়াঁ আলতাফ। মুফতিও ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

জম্মু এবং কাশ্মীর আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রশিদ। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের লাঙ্গাটে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন, তবে হেরেছিলেন। ওই তিনটি নির্বাচনেও নির্দলীয় প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন তিনি।
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রশিদ। ২০০৮ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সেই কারণেই নাম হয় ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। ইস্তফার দেয়ার পর শুরু করেন বিধানসভা ভোটের প্রচার। মাত্র ১৭ দিন প্রচার করে জিতেছিলেন ভোটে।
২০১৯ সালে এনআইএ’র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতার হন। সেই থেকে তিনি আছেন জেলে। দুই ছেলে আব্রার এবং আসরারই সামলেছেন তার ভোটের প্রচার। আর তাতেই হয়েছেন বাজিমাত।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রশিদ কি সংসদে শপথগ্রহণ করতে পারবেন? যদিও শপথগ্রহণ করা তার সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু যেহেতু তিনি কারাগারে, তাই বাধাও রয়েছে।
শপথ গ্রহণের জন্য রশিদকে আগে জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সংসদে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন তিনি। তবে এর পর আবার তাকে ফিরতে হবে জেলে।
শপথগ্রহণের পর রশিদকে লোকসভার স্পিকারকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে যে, তিনি সংসদে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। অনুপস্থিত হিসাবে তিনি সংসদের সদস্য থাকতে পারেন কি না, ভোটাভুটির মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
তবে রশিদ যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁকে দুই বছর বা তার বেশি সময় জেলে থাকতে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার সংসদ সদস্য পদ বিলুপ্ত হবে, এমনটাই নিয়ম।
আরো পড়ুন: প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে ফালাক ২ রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ