×

আন্তর্জাতিক

বিবিসির বিশ্লেষণ

জোট কি পারবে মোদিকে বিনয়ী করতে?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম

 জোট কি পারবে মোদিকে বিনয়ী করতে?

নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

   

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে ভারতকে। ২০১৪ সালের পর এবারই প্রথম জোট সরকার গঠন হচ্ছে।

অবশ্য জোট সরকার ভারতের জন্য কোনো নতুন বা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। কোনো কোনো সময় ডজনের মতো দল নিয়েও জোট গঠিত হয়েছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার ও প্রবৃদ্ধি এসেছে জোট সরকারের অধীনে। এক্ষেত্রে কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলেরই অবদান রয়েছে।

এরই মধ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, বিরোধীদের উত্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন তিনি। সেকারণে এনডিএ জোটের ওপরই বিজেপির ভাগ্য নির্ভর করছে।

এখন সবার কাছে একটাই প্রশ্ন মোদি কি জোট সরকার চালাতে পারবেন। কারণ তিনি এর আগে কখনই এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। প্রধানমন্ত্রী কিংবা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি একক সংখ্যারিষ্ঠতা নিয়ে সরকার চালিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে মোদি কী তার আধিপত্যবাদী মনোভাব ও ভিন্ন প্রকৃতির আঞ্চলিক মিত্রদের নিয়ে চলতে পারবেন? তিনি কি নিজের ইমেজ ধরে রাখার জন্য দলের মধ্যে থাকা অন্যান্য নেতা ও মিডিয়ার ওপর চাপ তৈরি করবেন?

অনেকেই মনে করছেন, জোট সরকারের মধ্যে খুব একটা স্বস্তিতে থাকবেন না নরেন্দ্র মোদি। জনতা দল ইউনাইডেড ও তেলেগু দেসাম পার্টির মতো দুইটি আঞ্চলিক দলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে মোদিকে। এই দুই দলের আসন রয়েছে ২৮টি। তাছাড়া এই দুই দলের নেতৃৃত্ব দিচ্ছেন ঝানু রাজনীতিবিদ নিতিশ কুমার ও এন চন্দ্রবাবু নাইডু। এর আগে তারা বিজেপির জোট সরকারে থাকলেও মতপার্থক্যের কারণে ক্ষমতাসীন দলটি ছাড়ার নজির রয়েছে। ২০১৯ সালে নাইডু যখন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন মোদীকে সন্ত্রাসী বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন।

জোট সরকার খুব স্বাভাবিক বিষয় হলেও ভারতের ক্ষেত্রে এবারের দৃশ্যপট ভিন্ন। যখন একটি সরকার মাত্র দুইটি বা তিনটি দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখন সেটা খুব টেকসই হয় না। কারণ একটি দলও যদি সরে দাঁড়ায় তাহলে ভেঙে পড়ে সরকার।

অনেকেই মনে করছেন মোদির অধীনে জোট সরকার গণতন্ত্রের জন্য ভালো হতে পারে। কারণ এমন পরিস্থিতিতে মোদির আধিপত্য কমবে, বাড়বে ক্ষমতার ভারসাম্য, উজ্জীবিত হবে বিরোধী দলগুলো। তাছাড়া আমলাতন্ত্র, বিচারবিভাগ ও গণমাধ্যমগুলো আরো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।

১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কয়েক দলের সমন্বিত জোট সরকার চালিয়ে ছিলেন বিজেপির আরেক প্রভাবশালী নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী। তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোকে বেসরকারিকরণ করেছেন, বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা দিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করেছেন, বাণিজ্য বাধাগুলো শিথিল করেছেন। এমনকি আইটিখাতের বিপ্লবেও অবদান রেখেছেন।

তিনি পারমাণবিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এক দশকের পুরনো স্থগিতাদেশের অবসান ঘটিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ঐক্যেরভিত্তিতেই তিনি এসব ক্ষেত্রে কাজ করেছেন।

তবে অতীতের চেয়ে মোদির বর্তমান জোট অনেক ভিন্ন প্রকৃতির। তবে জোট নেতা হিসেবে মোদীর আধিপত্য থাকতে পারে। কারণ তার দল ২৭২ আসনে জয় না পেলেও ২৪০টি আসনে জয় পেয়েছে।

এর আগে ১৯৯১ সালে ২৩২ আসন নিয়েও সফলভাবে সরকার পরিচালনা করতে পেরেছিল কংগ্রেস। এমনকি ২০০৪ ও ২০০৯ সালে যথাক্রমে ১৪৫ ও ২০৬ আসন পেয়েও সফলভাবে মেয়াদ শেষ করতে পেরেছিল কংগ্রেস।

অতীতে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোটগুলো মিত্রদের দাবি মিটাতে দলের মূল আদর্শিক ও মেরুকরণ বিষয়গুলোকে চাপিয়ে রেখেছিল। এখন তো দলের অধিকাংশ এজেন্ডা বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। যেমন কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা, রাম মন্দির নির্মাণ।

তবে বর্তমান জোট কি মোদির সুর নরম করাতে পারবে? বিশেষ করে মুসলিমদের ওপর মোদির যে মনোভাব সেক্ষেত্রে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও মোদি মুসলিমদের টার্গেট করেছিলেন।

ভারসাম্য বজায় রেখে জোটের রাজনীতিতে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখন প্রধান প্রশ্ন হলো কোন কোন ইস্যুতে জোটের অংশীদার ও বিজেপি একমত হতে পারবে।

মোদির দল একযোগে ফেডারেল ও রাজ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে একটি বিতর্কিত পরিকল্পনার জন্য চাপ দিচ্ছে, যা ভারত ১৯৪৭ সালে পরিত্যাগ করেছিল। তাছাড়া মোদির দল একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা অতীতে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও সংখ্যালঘু মুসলমান উভয়ই প্রতিরোধ করেছে।

২০২৬ সালের মধ্যে সংসদীয় আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একটি ইস্যু সামনে আসবে। দক্ষিণের রাজ্যগুলো মনে করছে মোদি নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, এমন রাজ্যে আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে।

জোট সরকারের অধীনে মোদিকে কেন্দ্র ও আঞ্চলিক ইস্যুতে অংশীদারদের কথা শুনতে হবে। টিডিপি ও জেডিইউ দুই দলই নিজেদের রাজ্যের জন্য বিশেষ মর্যাদা চেয়েছে অর্থাৎ আরো কেন্দ্রীয় ফান্ড বাড়াতে হবে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যেও মোদিকে কর্মসংস্থান তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়তে হবে। ভারতের অর্থনীতিতে কৃষি, জমি ও শ্রমখাতে অনেক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। মোদির যেকোন কিছু অর্জনের জন্যই এবার জোটের সঙ্গে পরামর্শমূলক পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে।

অনেকেই মনে করছেন, সব সময় আধিপত্য নিয়ে থাকা মোদির জন্য সম্মতির রাজনীতি খুব সহজ হবে না।

মোদির বায়োগ্রাফার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেছেন, হঠাৎ তাকে এমন একটি ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছে, যা তিনি তার জীবনে আগে কখনো করেননি।

কিন্তু সফল রাজনীতিবিদরা নতুন উদ্ভাবনের শিল্প আয়ত্ত করেন। ভারত কি এখন একজন নম্র, আরও পরামর্শমূলক ও সম্মতিপূর্ণ মোদিকে দেখতে পাবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দীপ শাস্ত্রী বলেছেন, এক্ষেত্রে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে। অতীত জোট নয়, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বিষয়টিকে দেখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App