অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে যা ছিল

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ ছাড়াও ১৪ বছর আগে দুই নারী তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। অভিযোগ আনা দুই নারীর মধ্যে একজন সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী আনা আরডিন।
অভিযোগ থাকলেও উইকিলিকস নিয়ে অ্যাসাঞ্জের কাজের জন্য অত্যন্ত গর্বিত আরডিন এবং তিনি মনে করেন এ জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা উচিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নামে যেসব যুদ্ধ হয় সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানার অধিকার আছে।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তার এবং তার পরিবারের জন্য আন্তরিকভাবে খুশি যে তারা একসঙ্গে থাকতে পারবে। যে অভিযোগে তিনি শাস্তি ভোগ করেছেন, সেটা ঠিক হয়নি।
উইকিলিকস যা করেছে তাতে তিনি অভিভূত। কিন্তু একই সময়ে তিনি হতাশও বোধ করেন, কারণ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তিনি যৌন হেনস্থার যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার হয়নি।
আরডির লেখা একটি বইয়ে তার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। বইটিতে তিনি লিখেছেন, উইকিলিকসে আফগান যুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহ পরে ২০১০ সালে আরডিন তাকে স্টকহোমে আমন্ত্রণ জানান। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ধর্মীয় শাখার আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। নিরাপত্তার কারণে অ্যাসাঞ্জ হোটেলে থাকতে চাননি এবং আরডিনের সেই সময় অন্যত্র যাওয়ার কথা ছিলো। ফলে অ্যাসাঞ্জকে তিনি নিজের ফ্ল্যাটে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও আরডিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসেন।
রাজনীতি এবং মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা শেষে এক সন্ধ্যায় আরডিনের ভাষ্যমতে তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত এক যৌন সম্পর্কের মুখোমুখি হয়েছেন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ তখন তাকে হেনস্থা করেছে।
আরো পড়ুন: সাড়ে ২১ কোটি টাকায় বিক্রি হলো নেপোলিয়নের পিস্তল
আরো পড়ুন: যে কারণে ইন্ডিয়ানরা ভোট দেয়নি ঋষি সুনাককে
তিনি অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে রাজি ছিলেন যতক্ষণ তিনি কনডম ব্যবহার করেন ততক্ষণ। কিন্তু কনডম ছিঁড়ে গেলেও অ্যাসাঞ্জ তা চালিয়ে যান। আরডিন সন্দেহ করেন যে অ্যাসাঞ্জ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ছিঁড়েছেন। যদি সেটা হয়ে থাকে তাহলে অ্যাসাঞ্জ সম্ভবত সুইডিশ আইন অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।
পরে, সেমিনারে অংশ নিয়েছেন এমন একজন নারী, আইনি কাগজপত্রে যার নাম এস ডব্লিউ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছেন বলে আরডিন লিখেছেন। এস ডব্লিউ বলেছিলেন, তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন এবং অনুমতি ছাড়াই অ্যাসাঞ্জ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
তবে সুইডিশ প্রসিকিউটরদের কাছে ২০১৬ সালে দেয়া এক বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জ বলেছিলেন, এসডব্লিউর সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিলো সম্পূর্ণ সম্মতিপূর্ণ। তিনি তার আইনজীবীদের সেই খুদে বার্তা দেখিয়েছিলেন যাতে ওই নারী একজন বন্ধুকে বলেছিলেন যে তিনি ‘আধো ঘুমে ছিলেন।’
দুই নারীই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছিলেন। আরডিনের মামলাটি যৌন অসদাচরণের অভিযোগে এবং এস ডব্লিউয়ের অভিযোগকে ধর্ষণের অভিযোগ হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিলো।
এসব খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলেও অ্যাসাঞ্জ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো অভিযোগ করছেন। উইকিলিকস তখন মাত্র ৭৬ হাজার মার্কিন সামরিক নথি ফাঁস করেছে। যেগুলো ব্যাপক বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এর ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি আইনের একটি অভিযোগে অ্যাসাঞ্জ দোষ স্বীকার করে। ২০২৪ সালে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে অবশেষে তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
তবে আরডিন এখনো চান, অ্যাসাঞ্জ যৌন হেনস্থার জন্য বিচারের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, যৌন নিপীড়ন সবসময় নৃশংস হবে, ব্যাপক পরিমাণে সহিংসতা জড়িত থাকবে এবং ভিকটিমকে প্রচণ্ড ট্রমাটাইজ করে ফেলবে এমন একটা ধারণা রয়েছে। যদি তা না হয় তবে আপনি প্রকৃত ভিকটিম বা প্রকৃত অপরাধী হতে পারবেন না।