জার্মানিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫২ এএম

২০২৬ সালে জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি : সংগৃহীত
২০২৬ সালে জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজও। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাটোর তিন দিনব্যাপী ৭৫তম শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিন এই ঘোষণা দেয়া হয়। খবর আল-জাজিরা।
ঘোষণা অনুযায়ী, জার্মানিতে পর্যায়ক্রমে টমাহক ক্রুজ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল বা এসএম-৬ ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আছে সেগুলোর চেয়ে এসবের পাল্লা অনেক বেশি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিন্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে রাশিয়া। দেশটি সতর্ক করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে স্নায়ুযুদ্ধকালীন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা ফিরে আসতে পারে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, আমরা শীতল যুদ্ধের দিকে অবিচলিত পদক্ষেপ নিচ্ছি। সরাসরি সংঘাতের ইঙ্গিত নিয়ে ফের স্নায়ুযুদ্ধের পরিস্থিতি ফিরে আসছে।
আরো পড়ুন : রাশিয়ার বিজয়কে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছে ন্যাটো
১৯৮৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান স্বাক্ষরিত ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটির (আইএনএফ) আওতায় ইউরোপে ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
২০১৯ সাল পর্যন্ত এ চুক্তির মেয়াদ ছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তৎকালীন দুই পরাশক্তি তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কমাতে সম্মত হয় এবং অস্ত্রের মজুত ধ্বংস করে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র ১৯৯০-এর দশকে তাদের নিজ নিজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করে। পরে স্লোভাকিয়া ও বুলগেরিয়াও একই পথ অনুসরণ করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে নিজেদের আইএনএফ চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, মস্কো চুক্তি লঙ্ঘন করে ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। এ ক্ষেপণাস্ত্র ন্যাটোতে এসএসসি-৮ নামে পরিচিতি। তবে মস্কো বারবার অস্বীকার করেছে, তারা ৫০০ থেকে ৫০০০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে গত জুন মাসের শেষদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার অবশ্যই মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র বহণকারী ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন শুরুর বিষয়ে নতুন করে ভাবা উচিত। পুতিন বলেন, রাশিয়া এ জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্র আবারো উৎপাদন শুরু করেছে এবং সেগুলো দিয়ে মহড়া চালানোর জন্য ডেনমার্ক ও ফিলিপাইনেও নিয়ে গেছে।
এদিকে ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধ ও গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসন সহযোগী বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাটোর সম্মেলনকালে নিউজউইককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এরদোয়ান এই মন্তব্য করেন।