শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পেছনে মার্কিন ভূমিকাকে হাস্যকর বললো যুক্তরাষ্ট্র

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:২৫ এএম

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বেদান্ত প্যাটেল। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর ভারতে আশ্রয় নেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে গুঞ্জন উঠলে অভিযোগটিকে হাস্যকর বলে আখ্যায়িত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বেদান্ত প্যাটেল এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এদিন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণবিক্ষোভের আয়োজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন। ওই বিক্ষোভ ও কয়েক সপ্তাহের সহিংসতার জেরে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, এটা খুবই হাস্যকর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। এটি একেবারেই মিথ্যা ধারণা। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিভ্রান্তিমূলক খবর দেখেছি । দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমজুড়ে তথ্যের সত্যতা আরো শক্তিশালী করার জন্য অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে সোমবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপের অভিযোগকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করা হয়।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশের ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল বলে যদি কোনো প্রতিবেদনে বলা হয় তা কেবলই গুজব ছাড়া আর কিছু নয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, রবিবার (১১ আগস্ট) ভারতের ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা তাদের একটি প্রতিবেদনে হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ চায়। ভারতীয় এই পত্রিকাটির দাবি, হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে পত্রিকাটির কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
এর জবাবে হোয়াইট হাউস সোমবার বলেছে, আমরা বিশ্বাস করি-বাংলাদেশি জনগণেরই বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা উচিত এবং আমাদের অবস্থান ঠিক এটাই।
এর আগে দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। সোমবার চাপের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাকে ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটাম দেওয়ার পর শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়ে ভারতে চলে যান। সেখান থেকে সম্ভবত যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিতে তিনি লন্ডনে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছিলো।
আরো পড়ুন: সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা, হতাহতের আশঙ্কা
এদিকে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের যে অভিবাসন আইন রয়েছে; সেখানে কোনো ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করে এসে রাজনৈতিক বা সাধারণ আশ্রয় নেয়ার বিধান নেই। এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পরপরই শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করে।