হেলেনের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত নর্থ নর্থক্যারোলিনা: জীবন বাঁচাতে মরিয়া মানুষ, ত্রাণের সংকট

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ নর্থক্যারোলিনা রাজ্যের ছোট ছোট শহরগুলোতে হেলেন ঘূর্ণিঝড়ের পর বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হয়েছে। ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়টি ফ্লোরিডার উপকূলে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ক্যাটাগরি ৪ হিসেবে আঘাত হানে এবং এর প্রভাবে উত্তর দিকে নর্থ নর্থক্যারোলিনা, টেনেসি, সাউথ নর্থক্যারোলিনা এবং আশেপাশের রাজ্যগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় সৃষ্ট সংকটে এই অঞ্চলে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি রাজ্যে ৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে নর্থ নর্থক্যারোলিনায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৩০ জন।
বিশেষ করে নর্থ নর্থক্যারোলিনার ব্ল্যাক মাউন্টেন, উডলন এবং নর্থ কোভ শহরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আটকে আছেন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তাদের উদ্ধার করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্রিয়ানা বোয়াজ নামের এক তরুণী তার ৮ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে আক্রান্ত এলাকায় আটকে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এখান থেকে বের হয়ে বাঁচতে চাই, কিন্তু বের হওয়ার কোনো উপায় পাচ্ছি না।
হেলেনের আঘাতে সৃষ্ট বন্যায় বহু সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত নর্থ নর্থক্যারোলিনা, টেনেসি এবং সাউথ নর্থক্যারোলিনার প্রায় ৩০০টি সড়ক বন্ধ রয়েছে। ইন্টারস্টেট ৪০ এবং ২৬ এর বিভিন্ন অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না। নর্থ নর্থক্যারোলিনার বানকোম্ব কাউন্টিতে প্রায় ৬০০ লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। খবর দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সারাদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে পৌঁছেছে। নর্থ নর্থক্যারোলিনা এবং সাউথ নর্থক্যারোলিনাসহ অন্যান্য রাজ্যে এখনো প্রায় ১২ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। যদিও ডিউক এনার্জি কোম্পানি জানিয়েছে, অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে, তবে পাহাড়ি অঞ্চলের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।
ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) সহ বিভিন্ন সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা করছে। নর্থ নর্থক্যারোলিনার গভর্নর রয় কুপার বলেছেন, মানুষ অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তাদের দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা খুবই জরুরি। তবে সড়ক যোগাযোগের সমস্যার কারণে অনেক জায়গায় এখনো পানি ও খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, স্থানীয় জনগণ নিজস্ব উদ্যোগে একে অপরকে সাহায্য করছে। ব্ল্যাক মাউন্টেনে অবস্থিত পিসগাহ ব্রিউয়ারির মালিক ডেভ কুইন তার ব্রিউয়ারির সংরক্ষিত পানি বিতরণ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আমরা হাজার হাজার মানুষের কাছে পানি পৌঁছে দিচ্ছি, কিন্তু চাহিদা এত বেশি যে আমাদের যা মজুত আছে তা শেষ হতে চলেছে। স্থানীয়রা ৫ গ্যালন প্লাস্টিকের জার এবং অন্যান্য পাত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন।
এদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, সামান্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও নতুন করে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে নদীগুলো এখনো ফুলেফেঁপে উঠেছে এবং অতিরিক্ত পানি স্রাবের কারণে কয়েকটি এলাকায় বন্যার সতর্কতা বহাল রয়েছে। বিশেষ করে কাতাওবা নদীর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে পরিস্থিতি এখনো বিপজ্জনক।
ব্ল্যাক মাউন্টেনের নিকটবর্তী স্বানানোয়ায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। স্থানীয় ফায়ার চিফ অ্যান্থনি পেনল্যান্ড বলেন, শহরের প্রধান সড়কগুলোর অনেক অংশই বিলীন হয়ে গেছে। পুরো এলাকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখন যে বাড়িগুলো রয়ে গেছে সেগুলোতে গিয়ে অনুসন্ধান করছি।
আরো পড়ুন: ইয়েমেনে বড় হামলা চালালো ইসরায়েল
এই বিপর্যয়ের পর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে আরো অনেক সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।