যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নবজাতকদের যত্নে ধুঁকছে মায়েরা, মানবেতর জীবন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩০ পিএম

দেইর আল-বালাহ শরণার্থী শিবিরে নবজাতক শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা রানা সালাহ। ছবি: রয়টার্স
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দেইর আল-বালাহ শরণার্থী শিবিরে এক মাস বয়সী মেয়ে মিলানাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন রানা সালাহ। তার চোখে কষ্ট আর যন্ত্রণার ছাপ। সন্তানের প্রতি মমতার পাশাপাশি, নিজের মেয়ে জন্মানোর জন্য এক ধরনের অপরাধবোধও অনুভব করছেন তিনি।
সালাহ বলেন, যদি আমার সিদ্ধান্তের বিষয় হতো, তবে যুদ্ধের মধ্যে আমি কখনো সন্তান জন্মাতাম না। কারণ, এখানে জীবন আর আগের মতো নেই। আগের দু’বার সন্তানের জন্ম দিয়েছি, তখন জীবন অনেক সহজ ছিল। আর এখন মনে হয়, নিজেকে ও আমার সন্তানকে বঞ্চিত করছি, আমরা এর চেয়ে ভালো জীবন প্রত্যাশা করি। খবর রয়টার্সের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গর্ভাবস্থায় জটিলতার কারণে মিলানার জন্ম হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আর ঘরে ফেরা হয়নি তাদের। শরণার্থী শিবিরের এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবুতেই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্যমতে, গত এক বছরে গাজায় প্রায় ২০ হাজার নবজাতকের জন্ম হয়েছে। চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ সংঘাতের নতুন আর ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই যুদ্ধের মধ্যে শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের এক আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের বিমান ও গোলাবর্ষণে গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২৩ লাখের বেশি গাজার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই এই মুহূর্তে ঘরছাড়া।
তাঁবুর তীব্র তাপ থেকে বাঁচাতে মিলানার গায়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন সালাহ। তিনি বলেন, আমাদের ঘরে ফেরার বদলে তাঁবুতে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। চারপাশে শুধু রোগ আর দূষিত পানি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায় প্রসূতি সেবা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে মা এবং তাদের নবজাতকদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশাধিকার অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়েছে এই এলাকাটিতে। সংস্থাটির ইস্টার্ন মেডিটারেনিয়ান অঞ্চলের জরুরি পরিচালক রিক ব্রেনান বলেন, অপুষ্টি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি এই অঞ্চলটিতে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে যদি মা বুকের দুধ খাওয়াতে অক্ষম হন এবং বিকল্প কোনো খাদ্য না পাওয়া যায়।
আরেক মা, মনার আবু জারাদ ৩ কন্যা সন্তানের জননী। তার স্বামী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ছোট্ট সাহারের জন্মের সময় সিজারিয়ান করতে হয় জারাদকে। তিনি বলেন, আমি চিৎকার করছিলাম, কীভাবে আমি মেয়েদের জন্য খাবার আর পানির ব্যবস্থা করবে, কীভাবে গোসল করাবো।
তার মেয়ে সাহার তাঁবুর একপাশে একটি দোলনায় শুয়ে রয়েছে, পাশে বসে তাকে দোলাচ্ছে সাহার অন্য বোনেরা। জারাদ বলেন, আমার পক্ষে মেয়েদের দেখাশোনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, এখানে কিছু সাহায্য পেয়েছি। তবে, দিনে একটি মাত্র ডায়াপার ব্যবহার করছি, ডায়পার কেনার মতো টাকা নেই আমার কাছে।
আরো পড়ুন: ইসরায়েলের ওপর অন্ত্র নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা বললেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
তাদের এই দুর্দশা অবসানের অপেক্ষায় আছেন জারাদ। তিনি বলেন, আমরা শুধু ঘরে ফিরতে চাই, এমনকি সেটা যদি তাঁবুও হয়। এভাবে বেঁচে থাকা আর সম্ভব না। বাথরুমের নোংরা পরিবেশ, রোগব্যাধির আতঙ্ক—সবকিছুই আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।