পাকিস্তানে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত
একটি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। সাংহাই কোঅপারেশন অরগানাইজেশন (এসসিও) নামের একটি আঞ্চলিক জোটের সম্মেলনে অংশ নিতে দেশটিতে সফরে যাবেন তিনি। প্রায় এক দশকের মধ্যে চির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশে ভারতীয় শীর্ষ কূটনীতিকের প্রথম সফর এটি।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জয়শঙ্কর ইসলামাবাদে যাচ্ছেন কেবল এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে। তবে সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আয়োজিত নৈশভোজ এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই জয়শঙ্করের। এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নৈশভোজে করমর্দন, সৌজন্য বিনিময় করতে হবে তাকে। যা নিঃসন্দেহে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়ায় সাউথ ব্লকের জন্য অস্বস্তির।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ছাড়াও ওই নৈশভোজে থাকবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারও। কূটনৈতিক মহল হালকা চালে বলছে, ওই ভোজ কতটা হজম হবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ক্যালেন্ডার অনুসারে দুদিনের সফরে যাচ্ছেন জয়শঙ্কর। তবে বাস্তবে তিনি ২৪ ঘণ্টারও কম সময় দেশটিতে অবস্থান করবেন।
আরো পড়ুন: পাকিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তরে জঙ্গি হামলা, ৩ পুলিশ নিহত
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী ১৫ ও ১৬ অক্টোবর ইসলামাদে এসসিওর সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।
ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও এই সংস্থার সদস্যের তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, চীন, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান।
কূটনৈতিক মহলের মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাকিস্তানে পাঠানো মোদি সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, যে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতোই ভারত অবশ্যই চায় পাকিস্তানের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক। কিন্তু তা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস থেকে চোখ ফিরিয়ে নয় বা কারো ইচ্ছাকে তোষামোদ করতে নয়। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এসসিও-র প্রতি ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তাকে সবচেয়ে বেশি তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে এই সিদ্ধান্তে।
জয়শঙ্করকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে সাউথ ব্লক এই বার্তাটাই দিতে চাইছে, দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের ঊর্ধ্বে উঠে তারা বহুপাক্ষিক আলোচনা এবং কূটনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি, অস্থির ও অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী বলয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাকিস্তান সফর একটি সার্বিক ইতিবাচক বার্তা বহন করবে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
জয়শঙ্করের কথায়, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। এসসিও-র একজন একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবেই যাচ্ছি।
আরো পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরো ৬২
এসসিওকে কখনও কখনও ন্যাটো সামরিক জোটের বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত এসসিও ফরম্যাটে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসসিও এর একটি ম্যান্ডেট থাকলেও, ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলনে বাণিজ্য, মানবিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিতে ফোকাস করা হবে।
উল্লেখ্য, উপমহাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কটা বরাবরই বৈরী। এই সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলোয়ামায় ভারতীয় সেনাদের বহনকারী একটি গাড়িতে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার হামলার পর থেকে। সেই হামলায় অন্তত ৪০ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন।
ওই হামলার পর প্রথমে পাকিস্তানের বালাকোটে ঝটিকা অভিযান চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। তারপর ওই বছর আগস্টে জম্মু-কাশ্মিরের সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারত তা আমলে না নেওয়ায় চরম তিক্ততায় পৌঁছায় দু’দেশের সম্পর্ক।
পাকিস্তানে ভারতের কোনো মন্ত্রীর সর্বশেষ সফর হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভারতের তৎকালীন পরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফর ছিল সেটি। তারপর গেল প্রায় ১০ বছরে ভারতের কোনো মন্ত্রী আর পাকিস্তান সফরে যাননি।