ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনা
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ইউক্রেনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাশিয়ার কঠোর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালায়।
এর ফলে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্পেন, গ্রিস, ইতালিসহ আরো কয়েকটি দেশও তাদের দূতাবাস বন্ধ করেছে।
এ অবস্থায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে সংকট সমাধানের জন্য যে হটলাইন চালু ছিল, তা এখন আর সচল নেই। এটি ছিল সেই যোগাযোগ মাধ্যম, ১৯৬৩ সালে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে গোপন দ্বার হিসেবে চালু করা হয়েছিল। যেন ভুল বোঝাবুঝি ও সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়।
রুশ সূত্রের বরাতে জানা যায় যে, ক্রেমলিন এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে বিশেষ হটলাইন বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে না। এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে তীব্রতর হয়েছে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানলে রাশিয়া তা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে গণ্য করবে। এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম, ফলে রাশিয়ার বড় শহরগুলোরও ইউক্রেনের হামলার আওতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউক্রেন রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার আগেই এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে।
মস্কো মনে করছে, তারা যুদ্ধের কৌশলগত লাভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে এবং বাইডেন তার সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথে পরিবর্তন আসতে পারে। বাইডেন প্রশাসন প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে এটিএসএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার অনুমতি দিয়েছে। একইসঙ্গে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে বাইডেন অ্যান্টি-পার্সনেল ল্যান্ডমাইন পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার সেনার রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়ার কারণে বাইডেন এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন। যা আমেরিকার জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত শিথিল করেছেন, ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় এখন আর সম্ভব হবে না বলে দাবি করছে রাশিয়া। গত তিন মাস ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অবিরত হামলা চালাচ্ছে এবং এ সপ্তাহের শুরুতে তাদের সবচেয়ে বড় আকাশ পথে আক্রমণ চালানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মানববিধ্বংসী স্থলমাইন সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেন দাবি করে আসছিল। এর ফলে উত্তেজনা আরো বাড়ছে, বিশেষত মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান এ পদক্ষেপকে ‘বড় ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন। যুদ্ধকে আরও ‘উস্কে দেবে’ বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
মার্কিন প্রশাসন, ইউক্রেনকে ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র এবং অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধচালানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এ সহায়তার মধ্যে রকেট সিস্টেমের বিস্ফোরক, কামান এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা দ্রুত দখলে নিচ্ছে। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে রাশিয়া পূর্বের বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেশি ভূমি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কুরস্ক অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা যা একসময় ইউক্রেন দখল করেছিল, তা আবার রাশিয়ার সেনারা পুনরুদ্ধার করেছে। রাশিয়া তাদের আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, এবং বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ার হয়ে সম্মুখ লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে, হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, এবং অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে।