ট্রাম্প ক্ষমতায় বসলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে যে প্রভাব পড়তে পারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২০ পিএম

ছবি: সংগৃৃহীত
দ্রুত ঘনিয়ে আসছে সময়। আর মাত্র অল্প কয়েকটা দিন বাকি। তারপরই ২০ জানুয়ারি ক্ষমতার কুরসিতে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কতোগুলো চ্যালেঞ্জকে তিনি নিয়ে আসছেন সামনে। তার মধ্যে অন্যতম অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া। আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের মতে শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কমে যেতে পারে পণ্যের চাহিদা। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশের এই শিল্প।
বাংলাদেশি পোশাক আমদানিতে যদি শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের এসব পণ্য বাড়তি দামে কিনতে হবে। তাতে বহুলাংশে চাহিদা কমে যেতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ক্রেতা ও বাংলাদেশি প্রস্তুতকারক দু’পক্ষের লাভে পড়বে টান। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মাসিক উলনিউজের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময়ে বাণিজ্যের বহুবিধ প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। এর মধ্যে আছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। তাতে শুরু হতে পারে বৈশ্বিক রপ্তানি ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা।
এতে আরো বলা হয়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮২৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। দিতে হয়েছে শতকরা ১৫.৬২ ভাগ শুল্ক।
বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের গার্মেন্ট রপ্তানি শতকরা ১৭ থেকে ১৯.০০ ভাগের মধ্যে উঠানামা করেছে। অন্যদিকে চীনা পণ্যের ওপর অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় শুল্কখাতে খরচ কমাতে বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজেছে যুক্তরাষ্ট্রের বহু খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড। এ কারণে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক সরবরাহকারীদের মধ্যে শীর্ষে। এখানে কম শ্রম খরচ এবং প্রতিষ্ঠিত প্রস্তুতকারকদের অবকাঠামো থাকায় ইতিবাচক সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির একজন সুপরিচিত রপ্তানিকারক বলেছেন, ট্রাম্প যত চীনবিরোধী হবেন, ততই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ট্রাম্প যদি অধিক হারে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন তাহলে ওইসব কাজের অর্ডার সরে বাংলাদেশে চলে আসার সম্ভাবনা প্রবল। অন্যদিকে চীনের মতো যদি অন্য দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে তাহলে তাতে নতুন করে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে অথবা যদি ভোক্তাদের চাহিদা পরিবর্তন হয় তাহলে আকস্মিকভাবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকখাতের অর্ডার কমে যেতে পারে। বাংলাদেশ হারাতে পারে রাজস্ব। যদি যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা না পায় বাংলাদেশ, তাহলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটে মানসম্পন্ন শুল্কের মুখোমুখি হবে। এর ফলে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। যেসব দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বাংলাদেশের। কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বেশ কিছু বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়।
এসব দেশের পণ্যের তুলনায় পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তৈরি পোশাকের দাম বেড়ে যেতে পারে শতকরা ১২.৫ ভাগ থেকে ২০.৬ ভাগ পর্যন্ত। ফলে ক্রেতারা বাড়তি দাম সামাল দিতে তাদের চাহিদা শতকরা ২২ থেকে ৩৩ ভাগ কমিয়ে ফেলতে পারেন।