×

আন্তর্জাতিক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, অস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া ভারতের

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১০ পিএম

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, অস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া ভারতের

শেখ হাসিনা

   

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জোরপূর্বক অপহরণ এবং গুমের ঘটনায় করা মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে এই আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। 

যথার্থ ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন তারা। পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) গ্রেপ্তারের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ওই ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করে হাজির করার নির্দেশও দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। 

গত বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সেই পরোয়ানায় তাকে গত বছরের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর আজ (সোমবার) ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যেখানে তাকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের মধ্যে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া অস্পষ্ট

ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বা সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ভারত সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হলেও এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ নরেন্দ্র মোদির সরকার এ বিষয়ে এখনও অবস্থান প্রকাশ করেনি। শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তবে ভারত সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গন এবং কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। 

মোদি সরকার এখনো বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান না নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে, সেই সবের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়েও শঙ্কিত ভারত।

এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া এবং ভারতের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি শুধু দুই দেশের নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সমীকরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আগামী দিনে ভারত এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে আরেক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না মোদি সরকার। যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকে তবে তার বিচার হবে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।  

আরো পড়ুন: লাইভে এসে শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য মেজর ডালিমের

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। প্রথম মামলায়ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আজকের শুনানিতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম সংঘটিত হয়েছে। গুমের জন্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে তুলে ধরা হয়। যাদের গুম অবস্থা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেটাও শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। একজন ব্যক্তির ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এসব গুম সংঘটিত হয়েছে।

গ্রেপ্তার ও তদন্তের স্বার্থে শুনানিতে সবার নাম প্রকাশ করেননি চিফ প্রসিকিউটর। তবে শেখ হাসিনাসহ চার আসামির নাম প্রকাশ করেন। অন্য তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। এর মধ্যে জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আরো পড়ুন: অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৪২৬ বাংলাদেশি ও ১৮ ভারতীয় নাগরিক আটক

চিফ প্রসিকিউটর শুনানিতে উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো, পদোন্নতির লোভে বিভিন্ন বাহিনীর কিছু লোক গুমের মতো অপরাধে লিপ্ত হন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এর আগের দুটি মামলায় একজন করে আসামি করা হয়েছে। গুমের আগের দুটি মামলায় একটিতে রাঙামাটির পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুলের সাবেক পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন ফারুকীকে এবং আরেকটিতে বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।

সোমবার সকালের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ। গুমবিরোধী সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলামসহ গুম হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App