লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছেন কারাবন্দিরাও

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২ এএম

ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার নজিরবিহীন দাবানল নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের দমকল বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রায় ১ হাজার কারাবন্দি নারী-পুরুষও।
লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে দাবানল নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকলে তাদের উপস্থিতি বাড়ে। খবর: বিবিসি
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের (সিডিসিআর) নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসব বন্দিকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
ভয়াবহ এ দাবানলে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ১০ হাজারের বেশি অবকাঠামো। পুড়ে গেছে ৩৭ হাজার একর এলাকা।
বিবিসি বলছে, রাষ্ট্র পরিচালিত ৩৫টি ফায়ার ক্যাম্প রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কারাবন্দিদের দমকলকর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে দুটি ক্যাম্প নারীদের জন্য।
এসব ক্যাম্পে ‘বন্দি-দমকলকর্মীর’ সংখ্যা ১ হাজার ৮৭০ জন। ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হওয়া বন্দিরা মূলত এসব ক্যাম্প থেকেই আসা।
তারা দাবালন নিয়ন্ত্রণে কমলা রঙের ‘জাম্পসুট’ পরে ক্যালিফোর্নিয়ার পেশাদার দমকল বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন।
সিডিসিআর ইমেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিবিসিকে বলেছে, ‘কারাবন্দি দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এবং ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য দিনরাত কাজ করছেন।’
১৯৪৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই স্বেচ্ছাসেবী প্রকল্প নিয়ে অনেক বিতর্কও আছে। অনেক সমালোচক একে শোষণমূলক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেন। অনেকে আবার একে দেখেন সংশোধনাগার হিসেবে।
‘বন্দি-দমকলকর্মীরা’ দৈনিক ৫ দশমিক ৮০ থেকে ১০ দশমিক ২৪ ডলার মজুরি পান। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করার সময় দৈনিক এক ডলার করে অতিরিক্ত পান তারা।
বিবিসি লিখেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার অপেশাদার দমকলকর্মীরা যে পারিশ্রমিক পান, তার তুলনায় বন্দি দমকলকর্মীদের উপার্জন অনেক কম। একজন অপেশাদার দমকলকর্মীর বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ডলার আয় করার সুযোগও রয়েছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার রিক্রুটমেন্ট প্রোগ্রামের (এফএফআরপি) সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক ‘বন্দি দমকলকর্মী’ রয়েল রামি বিবিসিকে বলেন, ‘আপনাকে তারা কেবল একজন সস্তা শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করে। আপনি যদি আগুন নেভানোর সময় মারা যান, তাহলে এর বিনিময়ে আপনাকে ন্যূনতম স্বীকৃতিও দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘তবে ক্যালিফোর্নিয়ার অন্য বন্দিরা কাজের জন্য যে পারিশ্রমিক পান, দমকলকর্মী হিসেবে তার চেয়ে বেশি মজুরি পাওয়া যায়।’
সিডিআরসি বলছে, দমকল শিবিরে অংশগ্রহণকারীরা ‘টাইম ক্রেডিট’ অর্জন করতে পারেন, যা তাদের কারাদণ্ডের সময়সীমা কমাতে সহায়তা করে।
রামির বরাতে বিবিসি লিখেছে, ‘মুক্তি পাওয়ার পর এসব বন্দি পেশাদার দমকলকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ এখানে একটা ব্যাপার কাজ করে। যেমন মানুষ যখন দমকলকর্মীদের কথা চিন্তা করে, তখন স্বভাবতই একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান কাউকেই কল্পনা করে, কারাগারে থাকা কাউকে নয়।’
যে কারণে এমন মানুষের কর্মসংস্থানের জন্যই রামি তার প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন।