৩৮ বছর বয়সে ২০০ বাড়ির মালিক, ভাড়া থেকে বছরে আয় ১১ কোটি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জাপানে পরিত্যক্ত বসতবাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও তা অনেক উদ্যোক্তার জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ রকমই একজন উদ্যোক্তা ওসাকার ৩৮ বছর বয়সী হায়াতো কাওয়ামুরা। তিনি এখন পর্যন্ত ২০০টি পুরোনো ও জরাজীর্ণ বাড়ি কিনে সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করেছেন। এরপর সেগুলো ভাড়া দিয়ে বছরে আয় করছেন প্রায় ১৪ কোটি ইয়েন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি টাকা।
ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন নকশার বাড়ির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন কাওয়ামুরা। পাহাড় থেকে শহরের সারি সারি বাড়ি দেখতে ভালোবাসতেন তিনি। ছাত্রজীবনে তাঁর এই আগ্রহ আরও গভীর হয়। প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি দেখতে যাওয়া ছিল তাঁর শখ, তবে সেসময় এসব বাড়ি কেনার সামর্থ্য ছিল না। এখন সেই আগ্রহই তাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্নাতক শেষ করে কাওয়ামুরা একটি প্রোপার্টি রেন্টাল কোম্পানিতে যোগ দেন। এই চাকরি তার আগ্রহ আরো উসকে দেয়। কিন্তু এই চাকরি বেশি দিন করতে পারেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধের জেরে তার বসের পদাবনতি হয়। এই ব্যাপারটি দেখে কাওয়ামুরার মনে হয়, অন্যের অধীনে কাজ করায় অনেক ঝুঁকি।
কাওয়ামুরা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম পদোন্নতি দক্ষতার ওপর নয়, বরং আপনার বস আপনাকে পছন্দ করেন কিনা তার ওপর নির্ভর করে।’ তিনি খেয়াল করেন, তার বেতন পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম। আর কাজের চাপও অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘আমি এই পরিমাণ আয় চেয়েছিলাম, যা পেলে আমাকে আর বেতনের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না।’
তাই আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাওয়ামুরা টাকা জমাতে শুরু করেন। ২৩ বছর বয়সে প্রথমবার এক নিলামে প্রায় ১৪ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। এরপর ফ্ল্যাটটি তিনি বার্ষিক ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় ভাড়া দেন। এর ঠিক ছয় বছর পর, এই ফ্ল্যাটটিই তিনি বিক্রি করেন ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকায়। কাওয়ামুরার এটিকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে লুফে নেন। সস্তায় পাওয়া যায় এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের জরাজীর্ণ বাড়িগুলো টার্গেট করেন তিনি। এগুলোর দাম ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার মধ্যে ছিল।
এভাবে জাপানের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি কিনতে শুরু করেন কাওয়ামুরা। এসব বাড়ির বেশির ভাগই জরাজীর্ণ বা পুরোনো ছিল। কিছু ছিল বেওয়ারিশ, যেগুলো তিনি অল্প দামে নিলামে কিনে নেন। এভাবে প্রায় ২০০টি বাড়ির মালিক হন কাওয়ামুরা। তিনি এই বাড়িগুলো সংস্কার করেন এবং ভাড়া দেন। ২০১৮ সালে করপোরেটের চাকরি ছেড়ে কাওয়ামুরা প্রতিষ্ঠা করেন নিজের রিয়েল এস্টেট ফার্ম ‘মেরি হোম’।
বর্তমানে এই ২০০ বাড়ি থেকে কাওয়ামুরার বার্ষিক আয় প্রায় ১১ কোটি টাকা! কাওয়ামুরা বলেন, ‘আমি কখনই রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ, একটি দীর্ঘমেয়াদি খেলা, যার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য এবং মনোযোগ।’