সামেক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট, চরম দুর্ভোগে রোগীরা

মসিউর ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
চিকিৎসা সেবায় সাতক্ষীরাবাসির একমাত্র ভরসার জায়গা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতাল। কোভিড চিকিৎসায় খ্যাতি অর্জন করা এই সামেক হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট প্রায় তিন মাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ জেলার রোগীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় তিন মাস সিটি স্ক্যান মেশিনটিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই সময় থেকে মেশিনটি বন্ধ আছে। দ্রুত মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পায়নি। তাহলে কি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে দীর্ঘ সময়ে নষ্ট থাকা মেশিনটি মেরামত হচ্ছেনা?
দেখা গেছে প্রতিদিন দূর—দূরান্ত থেকে আশা সাধারণ ও দূর্ঘটনায় আহত রোগী স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাত বিরাতে শঙ্কাটাপন্ন রোগীদের নিয়ে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি কোন ক্লিনিকে। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তাছাড়া রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দৈনন্দিন হাসপাতালে আসা রোগীরা। এছাড়া দৈনিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সামেক হাসাপাতাল সুত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাপান থেকে আমদানিকৃত ১০ কোটি টাকা মুল্যের সিটি স্কান মেশিনটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থাপন করা হয়। সিটি স্ক্যান মেশিনটি স্থাপনের পর জেলা ও জেলার বাইরে থেকে সাধারণ রোগীরা কম খরচে পরীক্ষা করেন। ৩০ আগষ্ট থেকে মুল্যবান সিটি স্ক্যান মেশিনটির সমস্যা দেখা দিলে সবধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা বন্ধ আছে।
আরো পড়ুন: ৬ শতাধিক পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়লো বার আউলিয়া
সদরের আজিজুর রহমান বলেন, শহর থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে আমার মা সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়। আমি দ্রুত মাকে নিয়ে সামেক হাসপাতালে যাই। জরুরি বিভাগে দেখিয়ে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে ডাক্তার দেখে বলেন এখনি সিটি স্ক্যান করা লাগবে। হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেশিন নষ্ট। অসুস্থ মাকে নিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক থেকে বেশি টাকা দিয়ে টেষ্ট করাই। তিনি আরো বলেন, রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হওয়ায় ডাক্তার আমার উপর ভীষণ রাগ করেছে। কিন্তু কি করবো। হাসপাতালের মেশিন ভালো থাকলে আমার এত ভোগান্তি হতনা। সাতক্ষীরাবাসির পক্ষ থেকে আমি, কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রুত সময়ে মেশিনটি মেরামতের জন্য।
জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালে আসা রোগী জাহানারা, হাকিম, সরমা, সিরাজুল, তৌহিদসহ অনেকে বলেন, ডাক্তার দেখিয়েছি। কিছু পরীক্ষা করার জন্য বলেছে। কিন্তু শুনছি হাসপাতালের মেশিন নষ্ট। এখন বাহির থেকে পরীক্ষা করাতে হবে। টাকা বেশি নিবে। এত টাকা কোথায় পাব তাই ভাবছি। তারা আফসোস করে বলেন, হাসপাতালের মেশিনটা যদি ঠিক থাকতো!
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের টেকনোলজিষ্ট আব্দুল হালিম জানান, সিটি স্কান মেশিনটির কুলার ও দুটি হার্ডডিক্স নষ্ট হয়েছে। দ্রুত মেরামত না করে এভাবে পড়ে থাকলে অন্যান্য মুল্যবান পার্টস নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মেশিনটি স্থাপনের পর একটানা ৭ বছর সার্ভিস দিয়েছে। এর ওয়ারেন্টি ছিলো পাঁচ বছর। সে হিসাবে দুই বছর পরেই মেশিনটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তার পরও ভালো সার্ভিস দিচ্ছিলো।
আরো পড়ুন: যুদ্ধাপরাধের মামলায় প্রথম মুক্তি পেলেন শামসুল হক
তিনি আরো বলেন, মেশিনটিতে খুবই কম খরচে সাধারণ রোগী ব্রেইন, বুক ও পেটের পরীক্ষা করতে পারতেন। কিন্ত মেশিনের কুলার ও দুটি হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত ৩০ আগষ্ট থেকে বন্ধ আছে। দ্রুত এটি মেরামত করা না গেলে অন্যান্য মুল্যবান পার্টসও নষ্ট হতে পারে।
আলোচ্য বিষয়ে সাতক্ষীরা চেম্বার অফ কমার্স’র পরিচালক শাহিনুর রহমান বাবু বলেন, এ জেলার অধিকাংশ মানুষ সরকারি খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য সামেক হাসপাতালে যায়। একুশ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবায় ভরসার জায়গা এই হাসপাতাল। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এই মেশিন। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিটি স্ক্যান মেশি একটানা তিন মাস নষ্ট হয়ে পড়ে থাকবে ভাবা যায়না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই, দ্রুত সময়ে মেশিনটি মেরামতের জন্য।
সামেক হাসাপাতালের পরিচালক ডা. কুরত-ই-খোদা বলেন, সিটি স্কান মেশিনটি ত্রুটি দেখা দেয়ায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এটি দ্রুত মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে একাধিকবার জানানো হয়েছে। দ্রুত মেরামতের জন্য আমি নিজেও দুই তিনবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে গিয়ে জানিয়েছি। কিন্ত তাতে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এতে করে প্রতিদিন দূর—দূরান্ত থেকে সাধারণ রোগী এসে ফিরে যাচ্ছে।
আলোচ্য বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. শেখ সায়েদুল হক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম সামেক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দ্রুত সময়ে মেশিনটি মেরামত করা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।