টু-ফিঙ্গার টেষ্ট নিয়ে হাইকোর্টের রায় জানা নেই সংশ্লিষ্ট অধিকাংশেরই

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম

মহিলা পরিষদের মতবিনিময় সভা। ছবি: ভোরের কাগজ
নারীর প্রতি অবমাননাকর টু ফিঙ্গার টেষ্ট বাতিল করে অনেক আগেই রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের দেয়া এই সম্পর্কে জানা নেই এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকরই। এমন কি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এ বিষয়ে জানেন না।
'টু-ফিঙ্গার টেষ্ট করার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা' বিষয়ক মত বিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার সাথে যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই হাইকোর্ট বিভাগের ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করে দেয়া রায়টি সম্পর্কে অবগত নন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগও সীমিত আকারের। ইতোমধ্যে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায়ের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে সব মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হলেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে তেমন কোন মনিটরিং করা হয়নি। এ অবস্থায় ধর্ষণের শিকার নারীর মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করে দেয়া রায়টি বাস্তবায়নে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানোর জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি মোট ১৪ টি সুপারিশ উপস্থাপন করে মহিলা পরিষদ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, আইসিডিডিআরবি’র ইমেরিটাস সায়েনটিষ্ট রুচিরা তাবাসসুম ও সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর (জেন্ডার ইকুয়ালিটি স্পেশালিস্ট) নাহিদা আক্তার; পাবলিক হেলথ স্পেশালিষ্ট ডা. রাহাত আরা নূর।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন- ঢাকা মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক (ফরেনসিক মেডিসিন) ডা. দেবিকা রায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেরল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ফরেনসিক মেডিসিন) ডা. আসমাউল হুসনা, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কোঅর্ডিনেটর মাহরুবা খানম, জেড এইচ শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালের অধ্যাপক এস কে জিন্নাত আরা নাসরিন, ডা. রাহাত আরা নূর, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুন নাহার, ডা. সায়রা বানু প্রমুখ।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে তবে সহিংসতা বাড়ছে। এই সহিংসতা প্রতিরোধে এখনকার সময়ে তৈরি হওয়া চাহিদার দিকে খেয়াল করতে হবে। হাইকোর্ট বিভাগের টু-ফিঙ্গার টেষ্ট নিষিদ্ধ করে দেয়া রায় বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সংস্থা এবং আইনী সংস্থাকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থাকে আরো সচেতন হতে হবে, একইসঙ্গে মানবিক হওয়ার পাশাপাশি পেশাগত দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে সদিচ্ছা থাকতে হবে।
ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী টু-ফিঙ্গার টেস্ট বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের পরও অনেক চিকিৎসক এ বিষয়ে এখনো সচেতন নয়। এটি বাস্তবায়নে ও সচেতনতা তৈরিতে চিকিৎসকদের ঐক্যবদ্ধভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
রুচিরা তাবাসসুম বলেন, টু-ফিঙ্গার টেষ্ট নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি আছে। এই টেষ্টের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয় কিনা তা পরিষ্কার নয়, এই ধারণাটাই অবৈজ্ঞানিক। ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে।
নাহিদা আক্তার বলেন, টু-ফিঙ্গার টেষ্টের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন মূল্যায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত গবেষণাটি ঢাকা, দিনাজপুর ও রংপুরে জেলায় হেলথ, লিগ্যাল সহায়তা দানকারী এনজিও গুলোর উপর করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার বাইরে ডাক্তার, আইনী সেবাদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি, পুলিশ টু-ফিঙ্গার টেষ্টের নিষিদ্ধ বিষয়ে তেমন সচেতন নয়, পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারণে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও তেমন কার্যকর নয়। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগে দেয়া প্রশিক্ষণ তেমন কার্যকর হয়নি। টু-ফিঙ্গার টেষ্টের কারণে সহিংসতার শিকার নারীর বিচার পাওয়ায় যেমন বাধা তৈরি হয় তেমনি তারা শারীরিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হন।
ডা. রাহাত আরা নূর বলেন, ধর্ষণের ঘটনার কেসস্টাডি তুলে ধরে বলেন নারী ও কন্যার শারীরিক পরীক্ষা করার সময় গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে, শিকার নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা রক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ডাক্তারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। মেডিকো লিগ্যাল যে এস ওপি করা হচ্ছে সেখানে টু-ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধের জোর দাবি থাকতে হবে। মেডিকো কারিকুলামে বিষয়টি যুক্ত করতে হবে।