কেন ফোন ধরতে চায় না জেনারেশন জেড ও মিলেনিয়ালরা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫১ এএম

জেনারেশন জেড। ছবি: সংগৃহীত
হ্যালো, আপনি ইয়াসমিন রুফোর ভয়েসমেইলে আছেন। দয়া করে কোনো বার্তা দেবেন না, কারণ আমি তা শুনব না বা আপনাকে ফিরতি কলও করবো না। এমন একটি ভয়েসমেইল বার্তা যদি আমার থাকত, তবে আমি বেশ খুশি হতাম। কারণ, বেশিরভাগ জেনারেশন জেড এবং মিলেনিয়ালদের মতো আমিও ফোন ধরতে চাই না।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ ফোন ধরেন না। ফোন বেজে উঠলে তারা তা উপেক্ষা করেন, টেক্সটের মাধ্যমে উত্তর দেন বা অপরিচিত নম্বরটি গুগল সার্চ করেন।
কেন ফোন কল এড়িয়ে চলছে যুবসমাজ?
আগের প্রজন্মের মানুষদের কাছে ফোনে কথা বলা ছিল স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তারা মেসেজিং অ্যাপ, টেক্সট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। জরিপে দেখা গেছে, ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের ৭০ শতাংশ টেক্সটকে ফোন কলের চেয়ে বেশি পছন্দ করেন।
মোবাইল ফোন কলের উত্থান ও টেক্সটের রাজত্ব
আমার কিশোর বয়সটা কেটেছে টেক্সট মেসেজিংয়ের মাধ্যমে। যখন আমি আমার ১৩তম জন্মদিনে একটি গোলাপি নকিয়া ফোন পেয়েছিলাম, তখন থেকেই টেক্সটিংয়ের প্রতি আমার আসক্তি শুরু হয়। ফোন কলগুলো ছিল কেবল জরুরি প্রয়োজনে, আর ল্যান্ডলাইনটা ব্যবহৃত হত অল্প কিছু সময়ের জন্য দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানির সাথে কথা বলার জন্য। ফোন কলের সময় খরচ বেশি হওয়ায় টেক্সটই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।
ফোন কলের প্রতি ভীতি ও নতুন যোগাযোগ মাধ্যম
ড. এলেনা টুরোনি একজন মনোবিজ্ঞানী। তিনি মনে করেন, ফোনে কথা বলার অভ্যাস না থাকার কারণে এখন তা অস্বাভাবিক মনে হয়। যার ফলে অনেকেই ফোন কলকে খারাপ কোনো সংবাদ বা বিপদের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেন। প্রায় অর্ধেকের বেশি তরুণ বিশ্বাস করেন যে কোনো অপ্রত্যাশিত ফোন কল মানেই খারাপ খবর।
এছাড়া, ব্যস্ত জীবনের কারণে আমাদের পক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা সম্ভব হয় না, বরং তা এখন কেবল গুরুত্বপূর্ণ খবর বা জটিল বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে অনেকেই ফোন কলের বদলে টেক্সট বা ভয়েস নোট ব্যবহার করেন। জরিপে দেখা গেছে, ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ ভয়েস নোটকে তাদের পছন্দের যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে।
কর্মক্ষেত্রে ফোন কল এড়ানো
ফোন কলের ভীতি ব্যক্তিগত জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা কর্মজীবনেও প্রভাব ফেলে। ৩১ বছর বয়সী আইনজীবী হেনরি নেলসন-কেস মনে করেন, ফোন কলে কথা বলার সময় আড়ষ্টতা, অস্বস্তি, এবং তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক উত্তর না দিতে পারার ভয় থেকেই অনেকে ফোন এড়িয়ে যান।
কী হারাচ্ছে এই প্রজন্ম?
ড. টুরোনি মনে করেন, যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে আমরা কথোপকথনের মাধ্যমে অর্জিত আত্মিক ও পেশাগত সংযোগ হারিয়ে ফেলতে পারি। ফলে কর্মক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে সম্পৃক্ততা কমে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: চাল কুমড়া পাতায় ইলিশের ঝোল
এই নতুন যোগাযোগের ধারা প্রজন্মের অনুকূল একটি প্রক্রিয়া, যা আমাদের সময়ের চাহিদা মেটাতে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমনটি আমরা ৯০-এর দশকে ফ্যাক্স মেশিনকে বিদায় জানিয়ে ইমেইলকে গ্রহণ করেছিলাম, তেমনই হয়তো এবার ফোন কলকেও ২০২৪ সালে পিছনে ফেলে রেখে টেক্সটকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
অনুবাদ: বিবিসি অবলম্বনে