আগের পৃথিবীটা আর থাকবে না

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২০, ১২:০৩ পিএম

কামাল চৌধুরী : কবি

কামাল চৌধুরী

কবি কামাল চৌধুরী
বিশেষ সাক্ষাৎকার কামাল চৌধুরী কবিকামাল চৌধুরী। বিশিষ্ট কবি। সত্তর দশকের কবিদের দীর্ঘ তালিকায় অসংখ্য বর্ণিল নাম থেকে মাত্র ক’জনের নাম বেছে নিতে চাইলেও একটি নাম বিবেচনায় থেকেই যায়। সে নামটি কবি কামাল চৌধুরীর। তার কবিতায় আছে স্বতন্ত্র এক স্বর। দারুণ ছন্দে বুননশীল তার হাত, কুশলী তার নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞান এই কবির কবিতার ভূমিতে একটি বড় ফসল। সেই মুক্তিযুদ্ধের দর্শনই তার জীবনদর্শন। আর তার বুকের মধ্যে যে প্রেম, সেই প্রেমও তার কবিতাকে অনায়াসে দখল করেছে। জীবনযাপনের কোলাহলের ভেতরেও কবিতাই তার সাধনা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যে কয়েকজন কবি নিজস্ব শিল্প-কুশলতায় নিজেকে বাংলা কবিতার নান্দনিক ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে কবি কামাল চৌধুরী অন্যতম নিঃসন্দেহে। বলা ভালো তার অবস্থান সম্মুখ সারিতেই। সেখানে জনমানুষের ক্রোধ ও বেদনা মন্থনের যুগল অভিব্যক্তি নিয়ে তার কবিতা চিহ্নিত। তার কবিতায় এমন এক মহিমায় উদ্ভাসিত, যা ক্রোধের বিস্ফোরক, কিন্তু বিধ্বংসী নয়। কামাল চৌধুরীর কবিতায় পাওয়া যায় এক মায়াময় আলেখ্য। কিন্তু এই আলেখ্য কোমলে কোমলে বিগলিত নয়। এসবের মিথস্ক্রিয়ায় যে শিল্পস্বর উঠে আসে তা প্রতিবাদী, কিন্তু উচ্চকণ্ঠী নয়। প্রায় চার দশক ধরে সাহিত্যাঙ্গনে মেধার জড়োয়া ছড়ানো কবি কামাল চৌধুরী এভাবেই হয়ে ওঠেন সত্তরের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী কবি। ‘মিছিলের সমান বয়সী’ থেকে শুরু করে তার গ্রন্থসংখ্যা প্রায় অর্ধ শতাধিক। বছরব্যাপী মুজিববর্ষের বিশাল কর্মযজ্ঞের নেপথ্য নায়কও এই কবি ও নৃতত্ত্ববিদ। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কবি বর্তমানে মুজিববর্ষ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক। কেমন কাটছে এই বিশিষ্ট কবি ও কর্মবীরের করোনাকাল? ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে সীমিত আকারে মুজিববর্ষের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। সেই কাজগুলো আমরা অনলাইনে সম্পাদন করছি। ইতোমধ্যে ৭ জুনের একটা বড় প্রোগ্রাম হয়েছে। তা টেলিভিশন থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার হয়েছে। এছাড়া অফিসের কাজগুলো করছি। যদিও আমাদের অফিস সীমিত আকারেই খোলা। মাঝে জুমে আমরা অফিসের কাজ সম্পন্ন করছি। কারণ আমাদের আরো অনেক প্রোগ্রাম আছে, যেসব সাজাচ্ছি। আশা করছি যতদিন পর্যন্ত জনসমাগম করা সম্ভব হবে না ততদিন পর্যন্ত মুজিববর্ষের এ কাজ আমরা অনলাইনে ডিজিটালেই সম্পন্ন করব। এছাড়া প্রতিদিন টেলিভিশনগুলোতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন’। এটা ইনফ্যাক্ট ব্যক্তিগতভাবে ফাইনালি আমিই দেখে দিচ্ছি। একটা টিমওয়ার্ক হচ্ছে। এটাও একটা বড় কাজ। যেহেতু এটা প্রতিদিন প্রচার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক তথ্য-উপাত্তে ভরা এই কাজটা দেখে ইতোমধ্যে লোকজন পছন্দও করেছে বলে আমার ধারণা। যেহেতু বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারছে। এই করোনাকালে কাজগুলো অফিসিয়ালি আমরা করছি। এছাড়া এর মধ্যে একটা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ হবে সেটারও কাজ চলছে এবং আরো অনেকগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ এর ফাঁকে ফাঁকে করছি। [caption id="attachment_226685" align="aligncenter" width="1007"]

এতদিন আমরা জেনেছি পুঁজিবাদের বিশ্বায়ন বা অর্থনীতির বিশ্বায়ন হচ্ছে। করোনারও একটা বিশ্বায়ন ঘটে গেছে। অন্য সময় এইভাবে ঘটেনি। এর ফলে যে অভিজ্ঞতাটা আমাদের হচ্ছে, যে পৃথিবীতে ছিলাম, তা ছিল খুবই পরিচিত আনন্দঘন একটা পৃথিবী। যে পৃথিবী ছিল মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং নৈকট্য ছিল। সেই নৈকট্যের জায়গা থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। আমাদের অন্তরের নৈকট্য আছে। কিন্তু এটাকে একটা করপোরিয়াল ডিসটেন্স বা শারীরিক নৈকট্যের জায়গাটার মধ্যে একটা সন্দেহ এবং সংশয় তৈরি হয়েছে। আমার ধারণা এই সন্দেহ এবং সংশয় শুধু করোনাকাল অতিক্রান্ত হলেই যে চলে যাবে ব্যাপারটা তা কিন্তু নয়। মানুষ বহুদিন ধরে এই সমস্যাটা মোকাবিলা করবে।আরেকটা কথা হচ্ছে স্বজনের প্রতি ভালোবাসাটা বহিঃপ্রকাশের জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। অসুস্থ হলে এখন কেউ কাউকে দেখতে যেতে পারছে না। অর্থাৎ এখন প্রত্যেকে চাচ্ছে নিজের সুরক্ষা। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ কারো জন্য এগিয়ে যেতে পারছে না। এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় আগে কখনো ঘটেনি। এবার যেটা ঘটেছে। আমার ধারণা আমরা এর পরে যে পৃথিবীটা পাব ওই পৃথিবীতে আগের পৃথিবীটা আর থাকবে না। অনেক পরিবর্তন ঘটে যাবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্বিক সব ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।