এতোদিন ভুল পৃথিবীর ব্যবস্থাপক ছিলাম

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ০১:৩১ এএম

আন্দালিব রাশদী

আন্দালিব রাশদী

আন্দালিব রাশদী
বিশেষ সাক্ষাৎকার আন্দালিব রাশদী কথাসাহিত্যিকআন্দালিব রাশদী। কথাসাহিত্যিক। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। আন্দালিব রাশদীর পঠন-পাঠন ও জানাশোনা এতই সর্বব্যাপ্ত যে তার হাতে যে কোনো ফরমায়েসি লেখাও হয়ে ওঠে একেকটি যথার্থ মননশীল রচনা। যিনি এদেশের সেইসব বিরলপ্রজ লেখকদের একজন যারা লিখে উপার্জিত টাকায় সংসার চালান। সারাবছরই লেখেন দুহাত ভরে। সেসব লেখা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিত হয়। সৃজনশীল লেখালেখির বিচরণক্ষেত্র মূলত উপন্যাস ও গল্প হলেও কিশোর সাহিত্য এবং অনুবাদে সিদ্ধহস্ত আন্দালিব রাশদীর বিষয়-নির্বাচন বরাবরই চমকপ্রদ ও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদসহ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। ব্যস্ত এই কথাসাহিত্যিকের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিন একটা না একটা মৃত্যুর সংবাদ শুনছি। তারা হচ্ছেন কেউ কেউ খুবই ঘনিষ্ট আপনজন। তেমনি শামসুন নাহার নামে আমার ছোটবেলার এক প্রতিবেশি যার সঙ্গে ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত এক সঙ্গে পড়েছি; যার সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল; কয়েকদিন আগে সে আমাকে ফোনে বলল, পান্থপথের (আমার বাবার বাড়ি, যেখানে আমি বড় হয়েছি) দিকে এলে হেনাকে একটু দেখে যেও। সে অসুস্থ। হেনা আমাদের আরেক প্রতিবেশি। আমিও প্ল্যান করেছি ওইদিকে গেলে হেনাকে একটু দেখে আসব। এর মধ্যে লন্ডন থেকে এক বন্ধু ফোন করে বলল, শামসুন মারা গেছে। শুনে মনটা ভয়ানক খারাপ হয়ে গেছে। প্রত্যেকদিন এরকম কাছের মানুষদের একেকটা মৃত্যুসংবাদ শুনে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে থাকতে হচ্ছে। [caption id="attachment_233806" align="aligncenter" width="700"]

মন্ত্রী তো একটা ইনস্টিটিউশন, সেখানে কী করে একজন মন্ত্রী বলেন যে, মন্ত্রীরা চুক্তি টুক্তি পড়ে না? এ প্রসঙ্গ নিয়েই একটা লেখা লিখেছি ‘মন্ত্রীরা এসব পড়ে না’ শিরোনামে। এর আগে করোনাকালের অর্থনীতি এক দুই তিনসহ করোনাকাল নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ যা লিখেছি তা দিয়েই একটা বই বেরুবে। এর নাম হবে ‘করোনাকাল’। এ ছাড়া আমার টেবিলে গল্প উপন্যাস অনুবাদসহ আট দশটা লেখা বরাবরই থাকে। এ ছাড়া অনেকগুলো বই কিনেছি, যা এতদিন পড়া হয়নি সেসব এখন পড়ছি।নিজের লেখালেখি প্রসঙ্গে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, চেনা জানা পরিবেশ থেকে আমি লিখি। আমার লেখায় সৌন্দর্য আর প্রকৃতির বর্ণনা কম পাওয়া যায়। আমার লেখায় থাকে মানুষের বর্ণনা। মানুষ কী করছে সেসব। লেখালেখির জীবনটা হচ্ছে অসাধারণ একটা শান্তির জীবন। একবার যদি বই এবং লেখালেখির মধ্যে ডুবে থাকতে পারা যায় সেটা অন্যরকম। হয়তো কেউ কেউ বলতে পারেন এটা পলায়নপর মনোবৃত্তি। আমি সেটাকে ওভাবে নিই না। আমার তো একটা আশ্রয় দরকার। আমি তো ইউরোপিয়ানদের মতো মদ্যপান করি না, ক্লাবে যাই না, পার্টি করি না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারি না। লেখালেখিটা তো আমার জন্য সবচে বড় আশ্রয়। এখন ভাবি, আমি যে পড়াশোনার অভ্যাসের মধ্যে ছিলাম, সেটাই আমাকে চারিদিকের যত যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেছে। বড় শান্তি পাই। [caption id="attachment_233807" align="aligncenter" width="686"]

আমরা একটা ভুল পৃথিবীর ব্যবস্থাপক ছিলাম এতোদিন। বা আমাদের হাতে পড়ে পৃথিবীটা ভুল পৃথিবী হয়ে গেছে। এখন প্রকৃতি আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে, আমরা আসলেই ভুল পথেই ছিলাম। তাই প্রকৃতির কাছেই ফিরতে হবে। প্রকৃতির নিজেরই নিজেকে ‘কিওর’ করার ক্ষমতা থাকে। আমরা যে বিশাল অহংকার করি, কত কিছু হয়ে গেছি আমরা! অথচ আমরা সামান্য একটা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কাছে কতো তুচ্ছ, এটা আরেকবার প্রমাণিত হলো। আমাদের অহংকারের সুযোগ আসলেই কম। এটা আবার নতুন করে বুঝতে হবে।আমাদের তুচ্ছতা সম্পর্কে করোনাভাইরাস একটা বড় রকম শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। আরেকটা বিষয় দেখে খুবই খারাপ লাগছে, আমরা এমন একটা নিকৃষ্ট জাতি যে, এই করোনায় মানুষের জীবন মৃত্যুর খেলা যেখানে, সেখানেও কীভাবে পয়সা কামাই করা যায়, কীভাবে নোংরা করা যায়- এমন সব কাজ করছি! এসব করে আমাদের দেশটাকে সারা পৃথিবীর কাছে ছোট করে ফেলেছি। এত সবের পরেও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে হয়তো সময় লাগবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।