গভীর রাতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ এএম

চলমান এ হামলায় ৪১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ছবি ; সংগৃহীত
গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় ‘নিরাপদ এলাকা’ বলে ঘোষিত বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবু ক্যাম্পে ইসরায়েল হামলা অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক মানুষ। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবু ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত এবং আরো ৬০ জন আহত হয়েছেন বলে ভূখণ্ডটির জরুরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে হওয়া এই হামলায় খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় অন্তত ২০টি তাঁবুকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
আল জাজিরা বলছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের চাপে আল-মাওয়াসি কার্যত উপচে পড়ছে। মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী খান ইউনিস এবং নিকটবর্তী রাফাতে স্থল আক্রমণের সময় উপকূলীয় এই অঞ্চলটিকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকে আল-মাওয়াসির এই তাঁবু ক্যাম্পেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা আরবি জানিয়েছে, জীবিতদের সন্ধানকারী উদ্ধারকারীরা বলেছেন- হামলার পর তারা তাঁবুর শিবিরে ৯ মিটার (৩০ ফুট) পর্যন্ত গভীর গর্ত খুঁজে পেয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই এলাকায় বিশৃঙ্খল দৃশ্য বর্ণনা করেছেন।
আরো পড়ুন : ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় মুসলিম সামরিক জোটের আহ্বান এরদোগানের
গাজার সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ঘটনাস্থলের প্রাথমিক মূল্যায়নে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তা হচ্ছে- আক্রমণটি ‘এই উন্মত্ত যুদ্ধের সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যাগুলোর একটি। হামলায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করতে অ্যাম্বুলেন্স এবং সিভিল ডিফেন্স ক্রুদের সমস্যা হচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মাঝে মাঝে এই অঞ্চলে এবং এর আশেপাশে অভিযান চালায়। হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মাদ দেইফকে হত্যার প্রতিবাদে জুলাই মাসে সবচেয়ে বড় হামলা চালানো হয় এ অঞ্চলে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল ওই হামলায় ৯০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর মঙ্গলবার ভোরে এএফপিকে বলেছেন, হামলায় ৪০ জন নিহত হয়েছে এবং ৬০ জন আহতকে উদ্ধার করে কাছাকাছি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের বিমান খান ইউনিসের মানবিক এলাকার মধ্যে একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মধ্যে হামাসের সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। গাজা উপত্যকায় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং আইডিএফ সৈন্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর জন্য মানবিক এলাকাসহ বেসামরিক এবং মানবিক অবকাঠামোর পরিকল্পিতভাবে অপব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়। তবে, হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, হামলার স্থানে তাদের যোদ্ধারা উপস্থিত ছিল, এমন দাবি একটি নির্লজ্জ মিথ্যা। যুদ্ধ চলাকালীন, ইসরায়েল বারবার হামাসের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ আনলেও হামাস সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার মানুষ নিহত এবং আরো ৯৪ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।