যুদ্ধ, কষ্ট ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
মিশরে আশ্রয় নেয়া গাজার গর্ভবতী নারী মোনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের মুখে এক লাখেরও বেশি মানুষ গাজা থেকে পালিয়ে মিশরে আশ্রয় নিয়েছেন। মোনা তেমনই একজন, যিনি গর্ভবতী অবস্থায় গাজা থেকে মিশরে পালিয়ে এসেছিলেন। তবে মিশরে তার কোনো স্থায়ী আশ্রয়স্থল নেই।
মোনা বরাবরই সমুদ্রের ধারে বাস করেছেন। গাজার তার বাড়ি ছিল সমুদ্রের খুব কাছে, যেখানে মন খারাপ হলে অথবা হতাশ লাগলে তিনি সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তবে গাজার যুদ্ধ সবকিছু বদলে দিয়েছে। সমুদ্র এখন মৃত্যুর নীরব দর্শক। যুদ্ধের শুরু থেকে মোনাকে অনেকবার আশ্রয় শিবির বদলাতে হয়েছে।
মোনা বলেন, কীভাবে ইসরাইলের ড্রোন এবং বিমান হামলা থেকে বেঁচে গেছি, তা ভাবলেই শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা রক্তের স্রোত অনুভব করি। গর্ভবতী অবস্থায় দুই শিশুকে নিয়ে, কোনোক্রমে মিশরে পালিয়ে এসেছেন তিনি। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের কাছে মোনা জানান, একদিনে যে পরিমাণ মৃত্যু এবং কষ্ট দেখেছি, তা বলার মতো নয়।
মোনা তার স্বামীকে গাজায় রেখে এসেছেন। প্রতিটি রাতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং স্বামীর কথা মনে পড়ে। মিশরে পালাতে গিয়ে মোনার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। তার বিদেশে থাকা আত্মীয়দের সাহায্যে তিনি সংগ্রহ করেছেন। তবে স্বামীর জন্য অর্থ সংগ্রহের মতো কোনো টাকা ছিল না।
এখন পর্যন্ত গাজার আহত এবং অসুস্থ মানুষদের মিশরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যদিও এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মিশরের একটি সংস্থা এ কাজে সহযোগিতা করছে, যার সঙ্গে মোনা মিশরে পৌঁছেছেন। শোনা যায়, ওই সংস্থাটি মিশরের সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তবে মিশরের প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বর্তমানে মিশরে কতজন ফিলিস্তিনি আছেন, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী সংখ্যাটি প্রায় এক লাখ, কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করছেন প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যার মূল হলো যারা মিশরে পালিয়ে এসেছেন, তারা মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কাজের মতো পরিষেবাগুলোর কোনোই ব্যবস্থা নেই তাদের জন্য। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা এই শরণার্থীদের কভার করতে পারছে না। কারণ ফিলিস্তিন শরণার্থী হিসেবে তার আওতাধীন নয়। ফলে এই শরণার্থীরা এখন পুরোপুরি মিশরের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকদের উপর নির্ভরশীল, যারা তাদের খাবার, পোশাক এবং অর্থ সরবরাহ করছেন।
এদিকে, ফিলিস্তিনের শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মিশরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো চাপের মুখে পড়ছে। মিশরে মূল্যবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বহু মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। শরণার্থীর সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হবে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। মিশর জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের স্থায়ীভাবে রাখতে চায় না, তবে ইসরাইলের সেনা গাজায় ফিরে যেতে তাদের বাধা দিতে পারে।
মোনা জানেন না, তিনি গাজায় ফিরে যেতে পারবেন কিনা। আপাতত সে বিষয়ে চিন্তা করতে চান না। কায়রোয় পৌঁছানোর পর মোনার পরিচয় হয় লুসির সঙ্গে, যিনি এক জার্মান মানবাধিকার কর্মী এবং প্রায় দুই দশক ধরে কায়রোয় বসবাস করছেন। লুসি মোনার জীবন বদলে দিয়েছেন এবং এখন মোনার সমস্ত দেখভাল করছেন। মোনার কাছে ছয় বছরের একটি মেয়ে, চার বছরের ছেলে এবং সদ্য জন্মানো একটি শিশু রয়েছে।
মোনা একা নন, মিশরজুড়ে এমন অনেক মোনা প্রতিদিন জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন। পালিয়ে আসার পরও তারা শান্তিতে নেই।