×

মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলকে রক্ষায় ৪৯ বার জাতিসংঘের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটো!

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

ইসরায়েলকে রক্ষায় ৪৯ বার জাতিসংঘের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটো!

গত কয়েক দশক ধরে দ্বিদলীয় ভিত্তিতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছে। ছবি : সংগৃহীত

   

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে দেশটি ৪৯ বার ইসরায়েল সম্পর্কিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২০ নভম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটি হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১৪ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

গাজায় ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্তে’ ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানো খসড়া প্রস্তাবটি  নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্য দেশ উঠিয়েছিল। এতে গাজায় বর্তমানে আটকে থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি দাবি করা হয়েছিল। তবে এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত প্রতিটি সদস্য পক্ষে ভোট দিয়েছে।

গাজা ভূখণ্ডে এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি সেনারা বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি গত মাস থেকে লেবাননেও হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। কিন্তু জাতিসংঘের আনা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে মার্কিন কূটনৈতিকরা বরাবরই ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার করছেন।

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের জন্য এই কূটনৈতিক সমর্থন নতুন কিছু নয়, গত কয়েক দশক ধরে দ্বিদলীয় ভিত্তিতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছে।

প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রায় তিন বিলিয়ন সামরিক সহায়তা দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থায় দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র হয়েছে। এর ফলে তারা ফিলিস্তিনে বর্বর হামলার কারণে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোকে অবরুদ্ধ করতে নিরাপত্তা পরিষদে তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করছে।

আরো পড়ুন : গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজার এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের ফলে প্রায় ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকাটিতে মানবিক বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

ভোটাভুটির সময় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপদূত রবার্ট উড বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করেছি, কোনো প্রস্তাব যদি জিম্মিদের মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তবে আমরা তেমন কোনো প্রস্তাবকে শর্তহীনভাবে সমর্থন করতে পারি না। তবে, অবশ্যই জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ হবে।

এদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের উপদূত মাজেদ বামেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, একটি যুদ্ধবিরতি অনেক প্রাণ রক্ষা করতে পারে। এটা এক বছর আগে যেমন সত্য ছিল, এখনো তা আরো বেশি সত্য।

তিনি আরো বলেন, যদিও একটি যুদ্ধবিরতি সবকিছুর সুরাহা করতে পারবে না, তবে এটি যে কোনো সুরাহারের প্রথম পদক্ষেপ।

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে নিরাপত্তা পরিষদে ওঠা প্রস্তাবের ভেটো দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন।

ইহুদি ভার্চুয়াল লাইব্রেরি অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০ সালে তার ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার শুরু করে। এর পর থেকে ইসরায়েল সম্পর্কিত নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আরো ৪৮ বার তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে।

লেবাননের সীমান্তে ইসরায়েলি আগ্রাসনে কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম রেজোলিউশন এস/১০৭৮৪ ‘মধ্যপ্রাচ্যের অবনতিশীল পরিস্থিতিতে’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

গিনি, যুগোস্লাভিয়া এবং সোমালিয়া এই প্রস্তাবের খসড়া প্রদান করে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যা রেজুলেশনে ভেটো দেয়। তবে পানামা ভোট থেকে বিরত থাকে।

পরবর্তী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র আরো বেশ কয়েকটি রেজুলেশনও ভেটো দেয়। ১৯৭৫ সালে লেবাননে গৃহযুদ্ধের সময় ইসরায়েলকে অবিলম্বে লেবাননের বিরুদ্ধে সমস্ত সামরিক আক্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। তখনো একমাত্র ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে স্পেন একটি খসড়া রেজুলেশন পেশ করেছিল, যাতে ইসরায়েলকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ‘লেবাননের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা থেকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে তার সমস্ত সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করার’ দাবি করা হয়েছিল। এতেও যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৫, ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালেও যুদ্ধবিরতিতে আনা খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেয়। ১৯৯০ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধ শেষ হয়, কিন্তু ২০০০ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল দেশটির দক্ষিণ অঞ্চল থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করেনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে। এসব হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ ও গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।  

এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েল থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটের মধ্যে গাজার মানুষ এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছেন।  

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App