ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর ঘটনায় সিরিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ এএম

সিরিয়ায় অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বসবাস আছে। ছবি : সংগৃহীত
ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর ঘটনার জের ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে সিরিয়া। দেশটির নতুন ইসলামপন্থী কর্তৃপক্ষকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। এ ঘটনায় কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম এইচটিএস।
সুকায়লাবিয়াহ শহরের প্রধান চত্বরে ক্রিসমাস ট্রিতে আগুনের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই শহরটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ইসলামপন্থী সংগঠন এইচটিএসের নেতৃত্বেই সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার উৎখাত হয়েছে। এইচটিএস প্রতিনিধিরা সিরিয়ার ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের স্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ক্রিসমাসের আগের রাতে ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দিচ্ছে দুই মুখোশধারী। ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার পর সুকায়লাবিয়াহ চত্বরে বিক্ষুব্ধদের সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন এইচটিএস এর ধর্মীয় নেতা। খ্রিস্টানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে তাকে ক্রস ধরে থাকতে দেখা যায়, যা সাধারণত রক্ষণশীল ইসলামপন্থীরা করেন না।
আরো পড়ুন : সিরিয়ায় আসাদ সরকার উৎখাতের কথা স্বীকার করল ইসরায়েল
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানী দামেস্কের একাংশসহ বিভিন্ন এলাকায় আগের চেয়ে বেশি বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। দামেস্কের কাছে কাসা এলাকায় লোকজনকে বিদেশি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সিরিয়া এখন মুক্ত, নন-সিরিয়ানদের চলে যাওয়া উচিত বলে জানান তারা।
দামেস্কের কাছে বাব তৌমা এলাকায় বিক্ষোভকারীরা একটি ক্রস আর সিরিয়ার পতাকা বহন করছিলেন। আমরা আমাদের ক্রসের জন্য জীবন দেবো, এমন স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।
জর্জেস নামে একজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা যদি আমাদের খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আমাদের দেশে বাস করতে না পারি, তাহলে আমরা এখানে থাকব না।
সিরিয়ায় অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বসবাস আছে। এর মধ্যে আছে কুর্দি, আর্মেনিয়ান, আসিরিয়ান, খ্রিস্টান, দ্রুজ, আলাউয়ি শিয়া ও আরব সুন্নি। শিয়া ও সুন্নি মিলে দেশটির মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী।
দুই সপ্তাহ আগে বিদ্রোহীদের হাতে উৎখাত হয়েছেন দীর্ঘদিন যাবত প্রেসিডেন্ট থাকা বাশার আল-আসাদ। তিনি ও তার পিতা ৫০ বছরেরও বেশি সময় দেশটি শাসন করেছেন। এরপর বাস্তুচ্যুত সিরিয়ানদের অনেকে নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। মঙ্গলবার তুরস্ক জানিয়েছে, ২৫ হাজারের বেশি সিরিয়ান দেশে ফিরেছে।
এদিকে, এখন এইচটিএস কীভাবে সিরিয়া শাসন করে সেটি হবে দেখার বিষয়। এই গোষ্ঠীটি একটি জিহাদি গ্রুপ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। তখন শরিয়া ভিত্তিক শাসনের জন্য সহিংসতার নীতি থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা আরো বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করে।
চলতি মাসের শুরুতে যোদ্ধারা যখন দামেস্কের দিকে যাত্রা শুরু করে তখন এর নেতারা 'সব সিরিয়ানদের জন্য এক সিরিয়া' বিনির্মাণের কথা বলেছিলেন।
মঙ্গলবার নতুন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের নেতা আহমেদ আল-শারা বিপ্লবী সব গ্রুপগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন যে সব গ্রুপকে এক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হবে। বার্তা সংস্থা সানা এই খবর দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ আল-বাশির বলেছেন বিদ্রোহী যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়টি পুনর্গঠন করা হবে। সিরিয়ায় অনেকগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। এর মধ্যে কয়েকটি এইচটিএস এর বিরোধিতাও করেছে। আরো কয়েকটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্পষ্ট নয়।
এইচটিএস এখনো জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় আছে। যদিও এটি পরিবর্তনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চলমান আছে।
যুক্তরাষ্ট্র এক সময় আহমেদ আল-শারার মাথার দাম এক কোটি ডলার ঘোষণা করেছিল। শুক্রবার তারা সেটি বাতিল করেছে। তবে, দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত আছে।
শুক্রবার তারা দেইর এজ্জর শহরে বিমান হামলা করেছে। এতে ইসলামিক স্টেট জিহাদি গ্রুপের দুজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি, ইসলামপন্থী চরমপন্থি এমনকি বিদায়ী সরকারের সমর্থক-এদের যে কারোরই নিরাপত্তাহীনতা কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় স্বার্থ থাকতে পারে। এটি সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থী নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।