গাজা দখলের হুমকি দিলেন ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১১ পিএম

ইসরায়েলি উগ্র ডানপন্থী নেতা ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। ছবি : সংগৃহীত
গাজায় এক অর্থে ইসরায়েলিদের পরাজয় হয়েছে। আর এটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না উগ্রবাদী ও কট্টরপন্থী ইহুদিরা। এদের মধ্যে অন্যতম ইসরায়েলি উগ্র ডানপন্থী নেতা ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। খবর মিডল ইস্ট মনিটরের।
ইসরায়েলি এই কট্টরপন্থী এবার দেশটির যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, গাজা দখল না করলে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে উৎখাত করা হবে।
গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে অত্যন্ত গুরুতর ভুল এবং হামাসের কাছে ইসরায়েলের আত্মসমর্পণ বলে অভিহিত করেছেন এই চরমপন্থী মন্ত্রী।
গাজায় রবিবার স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি। সকাল সাড়ে ৮টায় চুক্তি কার্যকরের সময় নির্ধারিত থাকলেও হামাসের জিম্মি তালিকা প্রকাশে বিলম্বের অভিযোগে এটি ৩ ঘণ্টা পিছিয়ে যায়।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ইসরায়েলের আর্মি রেডিওকে বলেন, ইসরায়েলের উচিৎ গাজা দখল করে একটি অস্থায়ী সামরিক সরকার গঠন করা। কারণ হামাসকে পরাজিত করার আর কোনো উপায় নেই।
আরো পড়ুন : ইসরায়েলের কফিনে শেষ পেরেক মারলো আল-আকসা
তিনি আরো বলেন, আমি সরকার পতনের ব্যবস্থা করব, যদি তারা এমনভাবে যুদ্ধ না চালিয়ে যায়, যাতে পুরো গাজা দখল ও সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়।
এর আগে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিবাদে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির তার দলের পক্ষ থেকে শাসক জোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অবশ্য তার দল সরে যাওয়ার পরও ১২০ আসনের নেসেটে শাসক জোটের ৬২টি আসন টিকে আছে।
গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির পক্ষে শনিবার ২৪ জন মন্ত্রী ভোট দেন, যেখানে আটজন এর বিপক্ষে ছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
তবে ইসরায়েলের হারেৎজ নামে পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও ট্যাংকের আক্রমণে নিহত এক হাজার ১৩৯ জনের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলের সেনা ও বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, যার জন্য আগে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর দায় চাপানো হয়েছিল।
চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলবে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে আসবে এবং প্রাথমিকভাবে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবে। বিনিময়ে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়া হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে পুরোপুরি সরে যাবে। শেষ পর্যায়ে মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ পরিবারগুলোর কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং গাজা পুনর্গঠনের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা শুরু হবে।
গাজায় এখনো ১১ হাজারের বেশি লোককে নিখোঁজ রয়েছে। ব্যাপক ধ্বংসের ফলে গাজায় একটি মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে যা সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলায় বিচারের মুখোমুখি।