মুক্তি পাচ্ছেন আরবেলসহ আরো ৬ ইসরায়েলি জিম্মি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ পিএম

ইসরায়েলি বেসামরিক জিম্মি আরবেল ইয়াহুদ। ছবি : সংগৃহীত
চলতি সপ্তাহের মধ্যে আরো ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক আরবেল ইয়াহুদও রয়েছেন। যার মুক্তি না দেয়াকে কেন্দ্র করে লাখো গাজাবাসীকে উত্তর গাজায় প্রত্যাবর্তন আটকে দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর বিবিসির।
গত শনিবার চারজন ইসরায়েলি নারী সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছে হামাস, কিন্তু ইয়েহুদকে তখন মুক্তি দেয়নি। এ কারণে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য হামাসকে অভিযুক্ত করে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে প্রথমে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দেয়ার কথা ছিল।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে সাতজন জিম্মি এবং প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেসামরিক নাগরিক আরবেল ইয়াহুদের মুক্তি না দেয়ায় উত্তর গাজায় প্রত্যাবর্তনে চেষ্টাকারী হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি দুই দিন ধরে সামরিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের কয়েক মাসের মধ্যস্থতায় টানা ১৫ মাসের সংঘাতের পর গত সপ্তাহে (১৫ জানুয়ারি) গাজায় দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত হয় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর দুটি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। নেতানিয়াহু এবং আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছিল, তৃতীয় বিনিময়ে শুক্রবার ইয়েহুদ এবং আরো দুইজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। শনিবার আরো তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে তারা।
এর বিনিময়ে সোমবার থেকে ফিলিস্তিনিদের উত্তর দিকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া শুরু করবে ইসরায়েল। পাশাপাশি সপ্তাহের শেষের দিকে আরো ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়া হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে, শনিবার ফিলিস্তিনিদের নেটজারিম করিডোরের উত্তরে ভ্রমণের অনুমতি দেয়ার কথা ছিল, যা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত সাত কিলোমিটার ভূমি। এটি উত্তর গাজাকে বাকি ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
বিশাল জনতা ইসরায়েলি সেনাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। রবিবার চেকপয়েন্টে নীরিম মুসাবেহ বিবিসিকে বলেন, আমরা রাস্তায় ঘুমাচ্ছি, বাড়ি যেতে পারছি না। যখনই আমরা বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করি, তখনই আমাদের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা।
৪২ বছর বয়সী এই নারীকে গাজার দক্ষিণে শেজাইয়ায় তার বাড়ি থেকে তাকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল। দিয়াব শেহবারি নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে চেকপয়েন্টে অপেক্ষা করছেন তিনি। সারা রাত বাচ্চারা ঠান্ডার কারণে চিৎকার করছিল।
ইসরায়েল জানিয়েছে, আরবেল ইয়াহুদকে মুক্তির পর সোমবার সকাল ৭টা থেকে বাসিন্দাদের উত্তর গাজা উপত্যকায় ফিরে যেতে দেবে।
আরো পড়ুন : ইসরায়েলি হামলায় ১৫ লেবানিজ নিহত
মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের কাছ থেকে আরবেল ইয়াহুদয়ের বেঁচে থাকার প্রমাণ চেয়েছিল ইরায়েল।
রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি গাজাকে 'পরিষ্কার' করতে চান। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবেশী মিসর এবং জর্ডানকে গাজা উপত্যকা থেকে আরো বেশি করে ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হামাস এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ উভয়ই এই আহ্বানের নিন্দা জানিয়েছে। অন্যদিকে জর্ডান এবং মিশরও এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান হয়। হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
এরপর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালায়। এই হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ফলস্বরূপ, গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেছে, যা মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের আক্রমণে ৪৭ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।