যুদ্ধবিরতিতেও লেবাননে ইসরায়েলি হামলা, আহত ২৪

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছে। ছবি : সংগৃহীত
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে দক্ষিণ লেবাননের একটি শহর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) চালানো এ হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের দাবি, তারা লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর গাড়ি লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু ও রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দক্ষিণ লেবাননের অন্যতম প্রধান শহর নাবাতিহে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা নাবাতিহের প্রান্তে অস্ত্র পরিবহনকারী হিজবুল্লাহর যানবাহনে হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি নাবাতিহের ওপর হওয়া এই দুটি হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছেন। মিকাতি মার্কিন জেনারেল জ্যাসপার জেফার্সের সঙ্গেও কথা বলেছেন, তিনি এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ নিযুক্ত কমিটির সভাপতিত্ব করছেন।
মিকাতির অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, লেবাননের নেতা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে ইসরায়েলের ওপর দৃঢ় চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন : উত্তর গাজায় ১ দিনে ফিরেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি
লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি ড্রোন নাবাতিহে আল-ফাওকার আল-রাওদাত স্কুলের কাছে রাস্তায় একটি পিকআপ ট্রাককে লক্ষ্য করে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় গাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং রাস্তায় পার্ক করা গাড়ি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ওই এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া কয়েকজন নাগরিক আহত হয়েছেন।
ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণটি আশপাশের এলাকাজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলেও নিউজ এজেন্সি উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি নাবাতিহের আল-ফাওকার মেয়র ইয়াসির গান্দুরকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ইসরায়েলি শত্রুরা বেসামরিক নাগরিকদের এবং নিজেদের বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানরত বাসিন্দাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করছে।
তিনি বলেন, শত্রু ড্রোনটি নাবাতিহের আল-ফাওকার প্রধান সড়কে শাকসবজি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত একটি পিকআপ ট্রাককে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করে দাবি করেছে, তারা দক্ষিণ লেবাননের চাকিফ এবং নাবাতিয়েহ অঞ্চলে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর দুটি গাড়িকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
একটি সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হুমকি দূর করার জন্য দক্ষিণ লেবাননের চাকিফ এবং নাবাতিয়েহ এলাকায় অস্ত্র পরিবহনকারী একটি হিজবুল্লাহ ট্রাক এবং একটি অতিরিক্ত গাড়িকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সামরিক বাহিনী আরো দাবি করেছে, অস্ত্র পরিবহনের সময় পর্যবেক্ষণের পরে ট্রাক এবং গাড়িটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতির বারবার লঙ্ঘন সত্ত্বেও, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জোর দিয়ে বলেছে, তারা ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সমঝোতা অনুসারে কাজ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের জন্য যে কোনো হুমকির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে বলেও জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিবৃতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি হিজবুল্লাহ।
গত রবিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা পার হওয়ার পরও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লেবাননের ভূখণ্ডে অবস্থান করায় উত্তেজনা আরো বেড়েছে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইসরায়েল এবং লেবানন ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইসরায়েলি প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, রবিবার থেকে দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা তাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ইসরায়েলি বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।
গত ২৭ নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর ১৪ মাস ধরে চলা সংঘাতের অবসানে ৬০ দিনের এক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার ফলে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতের অবসান ঘটেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৮০ জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু এবং স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। এ হামলায় ১৬ হাজার ৭৫৩ জন আহত হয়েছেন।